চেতনা বার্তা ডেস্কঃ আজ
১৪ ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। আমাদের জাতীয় ইতিহাসে গভীর বেদনা ও
শোকের একটি দিন। একাত্তরের এই দিনে স্বাধীনতার শত্রুরা হত্যা করে এ দেশের
কৃতী সন্তানদের।
চার দিকে যখন বিজয়ের রব, মুক্ত পরিবেশে মানুষ যখন রাস্তায় বের হয়ে আসতে শুরু করছে, ঘরে ফিরতে শুরু করছে, মানুষ যখন প্রাণভরে মুক্ত নিঃশ্বাস নেয়ার অনুপম আনন্দে শিহরিত হচ্ছে, বিজয়কে বরণের আনন্দে মেতে উঠছে, ঠিক তখনই এক শোকাবহ ঘটনার অবতারণা ঘটাল আমাদের স্বাধীনতার শত্রুরা। বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে জাতির কৃতী সন্তানদের তারা বাসা থেকে ধরে নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করল। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বরেণ্য ব্যক্তিত্ব তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা অধ্যাপক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও শিল্পীদের হত্যা করা হলো বেছে বেছে, যাতে এ জাতি স্বাধীনতা পেলেও আর কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে। তাদের ধরে নিয়ে রায়েরবাজার বেড়িবাঁধ এলাকা ও মিরপুরে জড়ো করে হাত- পা ও চোখ বেঁধে হত্যা করে তাদের লাশ ডোবার মধ্যে ফেলে রাখা হয়, যা এখন বধ্যভূমি নামে পরিচিত। ১৪ ডিসেম্বর তাই আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক শোকাবহ দিন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।
বুদ্ধিজীবী হত্যা প্রক্রিয়ায় যারা চিরকালের জন্য নিখোঁজ হয়েছেন এবং বধ্যভূমিতে যাদের লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, সাংবাদিক-সাহিত্যিক শহীদুল্ল কায়সার, ড. জেসি দেব, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য, ডা: ফজলে রাব্বী, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক মুনীরুজ্জামান, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, ডা: আলিম চৌধুরী, সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেন, ড. গোলাম মোর্তজা, ড. মোহাম্মদ শফি, সাংবাদিক নিজামউদ্দিন আহমেদ, লাডু ভাই, খন্দকার আবু তালেব, আ ন ম গোলাম মোস্তফা, শহীদ সাবের, আলতাফ মাহমুদ, রশীদুল হাসান, আবুল বাশার, ড. মুক্তাদির, সায়ীদুল হাসান, সেলিনা পারভীনসহ আরো অনেক।
বস্তুত ১৪ ডিসেম্বরের আগে থেকেই বেশ কিছু নামকরা বুদ্ধিজীবী নিখোঁজ হতে থাকেন। তবে ১৪ ডিসেম্বর সর্বাধিকসংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়। জাতির সেই সব কৃতী সন্তানের স্মরণে
প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় জাতি আজ স্মরণ করবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতি। এ ছাড়া রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভেও পুষ্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানানো হবে শহীদদের।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এ ছাড়া সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা পৃথক বাণীতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করেছেন।
স্বাধীনতার পর তরুণ চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। তরুণ এই চলচ্চিত্রকার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বুদ্ধিজীবী হত্যার রহস্য উদঘাটনের। তার সংগ্রহে মুক্তিযুদ্ধকালীন অনেক অমূল্য প্রামাণ্যচিত্র ছিল। ফলে স্বাধীন বাংলাদেশে জহির রায়হানের অন্তর্ধান আজো একটি বিরাট বড় রহস্য হিসেবে রয়ে গেছে, কারা কেন তাকে হত্যা করে লাশ গুম করেছে সে বিষয়ে।
রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেছেন, বুদ্ধিজীবীরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের সৃজনশীল, উদার ও গণতান্ত্রিক চিন্তাচেতনা জাতির অগ্রগতির সহায়ক। জাতির বিবেক হিসেবে খ্যাত আমাদের বুদ্ধিজীবীরা মহান মুক্তিযুদ্ধকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আমাদের সকলকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করুক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এক কলঙ্কময় দিন। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে নামে। তারা বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।’
খালেদা জিয়ার বাণী : শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলে এক বাণীতে বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গতকাল এক বাণীতে বলেন, একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে শাহাদত বরণকারী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করি।
তিনি বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা দেশের বরেণ্য শ্রেষ্ঠ সন্তান। তারা একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং মাথা উঁচু করা জাতি দেখতে চেয়েছিলেন। তারা ন্যায়বিচারভিত্তিক শোষণমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক সমাজের প্রত্যাশা করেছিলেন। দেশের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা অপশক্তি তাদের সে প্রত্যাশাকে বাস্তবায়িত হতে দেয়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হতে হবে।
কর্মসূচি
জাতীয় : যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ২০১৩ পালন উপলে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিবসটি উপলে আজ সকাল ৭টায় রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ এবং পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে শহীদ পরিবারের সদস্য ও উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। তারপর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আনুষ্ঠানিকতা শেষে মুক্তিযুুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শহীদ পরিবারের সদস্য ও উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় : আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উদ্যাপন উপলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-
আজ সকাল সাড়ে ৬টায় ভিসি ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক, ছাত্রছাত্রী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জমায়েত এবং সেখান থেকে সোয়া ৭টায় ভিসির নেতৃত্বে মিছিলসহকারে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণস্থ কবরস্থান, জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণস্থ স্মৃতিসৌধ ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গমন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ। বেলা ১১টায় ভিসির সভাপতিত্বে ছাত্র-শিক কেন্দ্র মিলনায়তনে আলোচনা সভা এবং বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসহ বিভিন্ন হল মসজিদ ও উপাসনালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া।
আওয়ামী লীগ : দিবসটি উপলে আওয়ামী লীগ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রতিবারের মতো এবারও দেশবাসীর সাথে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগাম্ভীর্যসহকারে এই শোকাবহ দিনটিকে স্মরণ ও পালন করবে।
এ উপলে গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছেÑ ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ।
সকাল ৭টা ৫ মিনিটে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং ৭টা ৩৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্র্পণ। এ ছাড়া সকাল ৮টা ৫মিনিটে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, বিকেল ৩টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে (খামারবাড়ী, ফার্মগেট) আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিএফইউজে-ডিইউজে আলোচনা
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) জাতীয় প্রেস কাব প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব শওকত মাহমুদ, ডিইউজের সভাপতি আবদুল হাই শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান গতকাল এক বিবৃতিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় উপস্থিত হতে আহ্বান জানিয়েছেন। সূত্রঃ নয়া দিগন্ত।
চার দিকে যখন বিজয়ের রব, মুক্ত পরিবেশে মানুষ যখন রাস্তায় বের হয়ে আসতে শুরু করছে, ঘরে ফিরতে শুরু করছে, মানুষ যখন প্রাণভরে মুক্ত নিঃশ্বাস নেয়ার অনুপম আনন্দে শিহরিত হচ্ছে, বিজয়কে বরণের আনন্দে মেতে উঠছে, ঠিক তখনই এক শোকাবহ ঘটনার অবতারণা ঘটাল আমাদের স্বাধীনতার শত্রুরা। বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে জাতির কৃতী সন্তানদের তারা বাসা থেকে ধরে নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করল। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বরেণ্য ব্যক্তিত্ব তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা অধ্যাপক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও শিল্পীদের হত্যা করা হলো বেছে বেছে, যাতে এ জাতি স্বাধীনতা পেলেও আর কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে। তাদের ধরে নিয়ে রায়েরবাজার বেড়িবাঁধ এলাকা ও মিরপুরে জড়ো করে হাত- পা ও চোখ বেঁধে হত্যা করে তাদের লাশ ডোবার মধ্যে ফেলে রাখা হয়, যা এখন বধ্যভূমি নামে পরিচিত। ১৪ ডিসেম্বর তাই আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক শোকাবহ দিন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।
বুদ্ধিজীবী হত্যা প্রক্রিয়ায় যারা চিরকালের জন্য নিখোঁজ হয়েছেন এবং বধ্যভূমিতে যাদের লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, সাংবাদিক-সাহিত্যিক শহীদুল্ল কায়সার, ড. জেসি দেব, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য, ডা: ফজলে রাব্বী, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক মুনীরুজ্জামান, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, ডা: আলিম চৌধুরী, সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেন, ড. গোলাম মোর্তজা, ড. মোহাম্মদ শফি, সাংবাদিক নিজামউদ্দিন আহমেদ, লাডু ভাই, খন্দকার আবু তালেব, আ ন ম গোলাম মোস্তফা, শহীদ সাবের, আলতাফ মাহমুদ, রশীদুল হাসান, আবুল বাশার, ড. মুক্তাদির, সায়ীদুল হাসান, সেলিনা পারভীনসহ আরো অনেক।
বস্তুত ১৪ ডিসেম্বরের আগে থেকেই বেশ কিছু নামকরা বুদ্ধিজীবী নিখোঁজ হতে থাকেন। তবে ১৪ ডিসেম্বর সর্বাধিকসংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়। জাতির সেই সব কৃতী সন্তানের স্মরণে
প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় জাতি আজ স্মরণ করবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতি। এ ছাড়া রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভেও পুষ্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানানো হবে শহীদদের।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এ ছাড়া সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা পৃথক বাণীতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করেছেন।
স্বাধীনতার পর তরুণ চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। তরুণ এই চলচ্চিত্রকার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বুদ্ধিজীবী হত্যার রহস্য উদঘাটনের। তার সংগ্রহে মুক্তিযুদ্ধকালীন অনেক অমূল্য প্রামাণ্যচিত্র ছিল। ফলে স্বাধীন বাংলাদেশে জহির রায়হানের অন্তর্ধান আজো একটি বিরাট বড় রহস্য হিসেবে রয়ে গেছে, কারা কেন তাকে হত্যা করে লাশ গুম করেছে সে বিষয়ে।
রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেছেন, বুদ্ধিজীবীরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের সৃজনশীল, উদার ও গণতান্ত্রিক চিন্তাচেতনা জাতির অগ্রগতির সহায়ক। জাতির বিবেক হিসেবে খ্যাত আমাদের বুদ্ধিজীবীরা মহান মুক্তিযুদ্ধকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আমাদের সকলকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করুক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এক কলঙ্কময় দিন। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে নামে। তারা বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।’
খালেদা জিয়ার বাণী : শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলে এক বাণীতে বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গতকাল এক বাণীতে বলেন, একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে শাহাদত বরণকারী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করি।
তিনি বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা দেশের বরেণ্য শ্রেষ্ঠ সন্তান। তারা একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং মাথা উঁচু করা জাতি দেখতে চেয়েছিলেন। তারা ন্যায়বিচারভিত্তিক শোষণমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক সমাজের প্রত্যাশা করেছিলেন। দেশের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা অপশক্তি তাদের সে প্রত্যাশাকে বাস্তবায়িত হতে দেয়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হতে হবে।
কর্মসূচি
জাতীয় : যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ২০১৩ পালন উপলে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিবসটি উপলে আজ সকাল ৭টায় রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ এবং পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে শহীদ পরিবারের সদস্য ও উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। তারপর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আনুষ্ঠানিকতা শেষে মুক্তিযুুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শহীদ পরিবারের সদস্য ও উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় : আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উদ্যাপন উপলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-
আজ সকাল সাড়ে ৬টায় ভিসি ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক, ছাত্রছাত্রী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জমায়েত এবং সেখান থেকে সোয়া ৭টায় ভিসির নেতৃত্বে মিছিলসহকারে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণস্থ কবরস্থান, জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণস্থ স্মৃতিসৌধ ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গমন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ। বেলা ১১টায় ভিসির সভাপতিত্বে ছাত্র-শিক কেন্দ্র মিলনায়তনে আলোচনা সভা এবং বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসহ বিভিন্ন হল মসজিদ ও উপাসনালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া।
আওয়ামী লীগ : দিবসটি উপলে আওয়ামী লীগ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রতিবারের মতো এবারও দেশবাসীর সাথে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগাম্ভীর্যসহকারে এই শোকাবহ দিনটিকে স্মরণ ও পালন করবে।
এ উপলে গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছেÑ ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ।
সকাল ৭টা ৫ মিনিটে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং ৭টা ৩৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্র্পণ। এ ছাড়া সকাল ৮টা ৫মিনিটে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, বিকেল ৩টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে (খামারবাড়ী, ফার্মগেট) আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিএফইউজে-ডিইউজে আলোচনা
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) জাতীয় প্রেস কাব প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব শওকত মাহমুদ, ডিইউজের সভাপতি আবদুল হাই শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান গতকাল এক বিবৃতিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় উপস্থিত হতে আহ্বান জানিয়েছেন। সূত্রঃ নয়া দিগন্ত।