File Photo |
নয়া দিগন্তের সৌজন্যেঃ বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কারাবন্দী বেগম খালেদা
জিয়ার স্বাস্থ্যের মারাত্মক অবনতির চিত্র তুলে ধরে বিএনপি বলেছে, ‘তিনি এখন
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।’ অবিলম্বে বিশেষায়িত হাসপাতালে রেখে তার
সুচিকিৎসার দাবি জানিয়েছে দলটি।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল শনিবার এক জরুরি সংবাদ
সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার খালেদা
জিয়ার শারীরিক অবস্থার বর্তমান চিত্র লিখিতভাবে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, অস্বাভাবিক মানসিক চাপে খালেদা জিয়ার আকস্মিক হৃদরোগে
আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মারাত্মক জীবন-বিনাশী জীবাণু
দ্বারা ফুসফুসের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়ার আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া
কারাগারে থাকার সময় সেখানকার পরিবেশের জন্য ভয়ঙ্কর মাত্রার ভিটামিন-ডি ও
ক্যালসিয়াম-শূন্যতা দেখা দিয়েছে, যা তার হাড়ের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে
আনতে পারে। এমনিতেই অনেক আগে থেকেই তিনি বাম কাঁধ ও হাতের ব্যথায় ভুগছেন।
এখন সেই ব্যথা ডান কাঁধ ও হাতে সম্প্রসারিত হয়ে মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে।
তিনি এখন দুই হাতেই নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করছেন।
ব্যারিস্টার জমির বলেন, দেশনেত্রীর সর্বশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষায় জানা
গেছে, ইনসুলিন ব্যবহারের পরেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ তো হচ্ছেই না, বরং তা
বিপজ্জনক মাত্রায় অবস্থান করছে। ইতোমধ্যে তার মুখে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে, এই
ক্ষতের জন্য মুখে প্রচণ্ড ব্যথার সৃষ্টি হয়েছে, যার কারণে তিনি স্বাভাবিক
খাওয়া-দাওয়া করতে পারছেন না, কোনোরকমে জাউ খেয়ে জীবন ধারণ করছেন। অথচ
সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী ও নেতারা বেগম জিয়ার
অসুস্থতা নিয়ে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করে যাচ্ছেন, যা শুধু অমানবিকই
নয়, নিষ্ঠুর মনুষ্যত্বহীন মনেরও বহিঃপ্রকাশ।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলছেন- ‘বেগম জিয়া আয়েশ করে পায়েস খাচ্ছেন।
তিনি অসুস্থতার নামে নাটক করছেন।’ দেশের একজন বর্ষীয়ান ও জনপ্রিয়
রাজনীতিবিদের অসুস্থতা নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী যে ধরনের বিদ্রƒপ ও রসিকতা
করে আসছেন তা নজিরবিহীন। এ ধরনের দৃষ্টান্ত সভ্য দেশ ও সমাজে একেবারেই
বিরল। কারাগারের দূষণযুক্ত পরিবেশে তার স্বাস্থ্য, সুস্থতা ও জীবন সবই
অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বেগম জিয়া এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
বেগম জিয়ার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য
একজন বন্দীর মানবাধিকারকে অবজ্ঞা করার শামিল এবং এই বক্তব্য কেবল
প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করার জন্য বলে উল্লেখ করেন জমির উদ্দিন সরকার। তিনি
বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিষ্ঠুর রসিকতায় একটি স্বৈরাচারী সরকারের ভয়াবহ রূপটিই
ফুটে ওঠে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে নিজ দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য
রাখার একপর্যায়ে বলেছিলেন যে, বেগম জিয়া কোনো দিনই কারাগার থেকে বের হবেন
না। তিনি দেশে এসে সেটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বাস্তবায়ন করছেন। ইতোমধ্যে
কেরানীগঞ্জে আদালত স্থানান্তরের এসআরো জারি করা হয়েছে। অশুভ উদ্দেশ্যেই
কারাগারে আদালত বসানো হচ্ছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার কোনো সাজাই
চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়নি। এমতাবস্থায় জামিন না দিয়ে তাকে কারাগারে রাখা
সংবিধান ও মানবাধিকার পরিপন্থী। বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার যাতে চরম
অবনতি না ঘটে সেজন্য তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করানোর দাবি
জানান জমির উদ্দিন সরকার। খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে আপাতত কোনো
চিন্তাভাবনা নেই বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা
জিয়ার প্যারোল নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তা নেই। সরকার দাবি না মানলে, যা করলে
দাবি মানবে তা করব আমরা।
দলটির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, খালেদা
জিয়ার শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ। আজকে সরকারের একটা অংশ ষড়যন্ত্র করছে
চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তাকে কেরানীগঞ্জ নিয়ে যাওয়ার জন্য। খালেদা জিয়াকে
শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে, শোচনীয় পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ইনসুলিন নেয়ার পরও
খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই। তার ব্লাড সুগার ১৪-১৬ মাত্রায়
রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান,
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস
সালাম, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, নির্বাহী
কমিটির সদস্য মীর হেলাল প্রমুখ।