চেতনাবার্তা ডেস্কঃ রাজধানীর কলাবাগানে নিহত শিক্ষার্থী আনুশকা নূর আমিনের (১৭) শরীরে বিকৃত যৌনাচারের আলামত মিলেছে। বড় আকৃতির কিছু একটা ভিক্টিমের দেহে পুশ করানোর ফলে তার বিশেষ অঙ্গ ফেটে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয় এবং সে মারা যায় বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনুশকার ময়নাতদন্ত হয়। সেখানকার ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, স্বাভাবিক শারীরিক সম্পর্কে এতটা ভয়াবহ পরিণতি হওয়ার কথা নয়। শরীরের নিম্নাঙ্গে কোন ‘ফরেন বডি’ কিছু একটা ব্যবহার করা হয়েছে। এক কথায় সেখানে বিকৃত যৌনাচার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি আমার পোস্টমর্টেম জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, স্বাভাবিক শারীরিক সম্পর্কে এই ইনজুরি মোটেও সম্ভব না। ওটা অন্য কিছু ছিল।
যোনিপথ ও পায়ুপথ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে ভুক্তভোগীর মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা এই চিকিৎসকের। তিনি বলেন, প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় সে ‘হাইপো ভোলেমিক’ শকে মারা গেছে। মানুষের মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা দেহ থেকে অতিরিক্ত তরল বের হয়ে গেলে হৃদপিণ্ড স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায়। এ কারণে হৃদযন্ত্র শরীরে রক্ত সরবরাহ করতে পারে না, মানুষ মারা যেতে পারে।
এদিকে রোববার (১০ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে একমাত্র আসামি ফারদিন ইফতেখার দিহানের (১৭) ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক আ ফ ম আসাদুজ্জামান। ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা আবেদনটি মঞ্জুর করেন।
এদিকে রোববার (১০ জানুয়ারি) ধর্ষণ-হত্যার তদন্তের অগ্রগতি জানাতে প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান জানান, শিক্ষার্থী আনুশকা নূর আমিনের সঙ্গে ফারদিন ইফতেখার দিহানের দুইমাস আগে থেকে সম্পর্ক ছিল।
তিনি জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে জানা গেছে তাদের আরও দুইমাস আগে থেকে সম্পর্ক ছিল। তবে এ বিষয়ে এখনো তদন্ত চলছে।
উপকমিশনার আরও বলেন, হাসপাতালের দেওয়া বয়সের উপর ভিত্তি করেই পুলিশ নিহতের বয়স প্রাথমিকভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদের আদালতে দিহান দায় স্বীকার করে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওই দিনই নিহত ছাত্রীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত শেষে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছিলেন ডা. সোহেল মাহমুদ।
তিনি আরও বলেছিলেন, মৃত্যুর আগে চেতনানাশক কিছু খাওয়ানো হয়েছিল কিনা, তার জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করে কেমিক্যাল পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। এসব রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে।
মামলাসূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) সকালে বন্ধু দিহানের মোবাইল কল পেয়ে বাসা থেকে বের হন রাজধানীর ধানমন্ডির মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নূর আমিন। এরপর কিশোরীকে কলাবাগানের ডলফিন গলির নিজের বাসায় নিয়ে যান দিহান। ফাঁকা বাসায় তাকে ধর্ষণ করা হয়। অসুস্থ হয়ে পড়লে দিহানসহ চার বন্ধু তাকে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক ছাত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পর অভিযুক্ত দিহানকে গ্রেফতার করা হয়।
এ ঘটনায় আনুশকার বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) সকালে আমার স্ত্রী ও আমি বের হয় হই। পরে আমার মেয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় তার মাকে ফোন দিয়ে বলে সে কোচিংয়ের পেপার্স আনতে বাইরে যাচ্ছে। দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে দিহান আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলে আমার মেয়ে তার বাসায় গিয়েছিল। সেখানে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করেছে। এ কথা শুনে আমার স্ত্রী দুপুর ১টা ৫২ মিনিটের দিকে হাসপাতালে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে জানতে পারেন আমাদের মেয়েকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হয়েছে।
এদিকে গত শনিবার (৯ জানুয়ারি) সকালে গোপালপুর কেন্দ্রীয় গোরস্থানে আনুশকার দাফন সম্পন্ন হয়। আনুশকা হত্যার বিচারের দাবিতে গ্রামবাসী প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করেছে, হত্যার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের ফাঁসির দাবি জানান গ্রামবাসী।