চেতনাবার্তা ডেস্কঃ মেধা-যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও একজন সরকারি চাকরিজীবী/কর্মকর্তা চাকরি জীবনের বেশির ভাগ সময় অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করবেন, আর একজন সব ভালো পোস্টিং এনজয় করবেন, তা হবে না। এক্ষেত্রে সমনীতি কার্যকর করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ক্যারিয়ার প্ল্যানিং উইংকে আরো শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে।
বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রে মেধা-যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়নসহ সমগ্র চাকরি জীবনে একটি ভারসাম্যের নীতি বহাল রাখাকে প্রাধান্য দিয়ে সরকারি প্রশাসনে পদায়ন নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বদলি ও পদায়ন নীতিমালায় ভারসাম্যের নীতি প্রতিষ্ঠা করতে জেলা ও উপজেলাগুলোকে ৩ শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে ‘ক’ শ্রেণির জেলা ২৫টি, ‘খ’ শ্রেণির ২০টি এবং ‘গ’ শ্রেণির ১৯টি। এভাবে উপজেলাগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি এজন্য করা হয়েছে, যেন কোনো কর্মকর্তাকে ঘুরেফিরে ৩ শ্রেণির জেলা-উপজেলায় পোস্টিং দেয়া যায়।
নীতিমালায় কয়েকটি পদে পদায়নের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা সন্নিবেশিত থাকবে। এরমধ্যে নিজ বিভাগ ব্যতীত সহকারী কমিশনারদের (শিক্ষানবিস) অন্য বিভাগে পদায়ন করতে হবে। কমপক্ষে ২ বছর শিক্ষানবিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রশাসনিক কারণ ছাড়া এ সময়ে অন্যত্র বদলি করা যাবে না। তবে তা হবে কমিটির সুপারিশে।
চাকরি স্থায়ী হওয়ার পর জ্যেষ্ঠতা বজায় রেখে সহকারী কমিশনার (ভূমি), সহকারী কমিশনার পদে পদায়ন করতে হবে। এ পদে তিনি সর্বোচ্চ ২ বছর দায়িত্ব পালন করবেন। এরপর তাকে বিভাগীয় কমিশনার অথবা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবশ্যিকভাবে পদায়ন করতে হবে।
সিনিয়র স্কেলপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্য হতে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর/চার্জ অফিসার/জেসিও পদে পদায়ন করতে হবে। তবে সেক্ষেত্রে এসি ল্যান্ড পদে যারা বেশি দক্ষতার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। কিন্তু এসি ল্যান্ড হিসেবে তিনি যে জেলায় কর্মরত ছিলেন তাকে সেই জেলা ব্যতীত অন্য জেলায় পোস্টিং দিতে হবে।
এছাড়া সিনিয়র স্কেলপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্য হতে জেলা পরিষদের সচিব/পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে পদায়ন করতে হবে। এজন্য তাদের চাকরি যথারীতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত হবে।
অপরদিকে সিনিয়র স্কেল প্রাপ্তি এবং চাকরির মেয়াদ কমপক্ষে ৬ বছর পূর্ণ হওয়ার পর একজন কর্মকর্তাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে পদায়নে ফিটলিস্টভুক্তির জন্য বিবেচনা করা যাবে। তালিকাভুক্ত কর্মকর্তাকে তার নিজ এবং স্বামী বা স্ত্রীর জেলা ব্যতীত অন্য কোনো জেলায় পোস্টিং দিতে হবে। এ পদে তার সাধারণ কর্মকাল হবে ২ বছর। তবে কোনো ইউএনওকে একই জেলায় একাধিক উপজেলায় পদায়ন করা যাবে না।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, বিভাগীয় কমিশনারসহ মন্ত্রী ও সচিবদের পিএসসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের পদে পদায়নে বিস্তর গাইডলাইন রয়েছে এ নীতিমালায়।
পদায়ন নীতিমালা প্রস্তুত করতে ৩ মাস আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডিকে (অতিরিক্ত সচিব) প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে এপিডি উইং ছাড়াও সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকটি উইংয়ের কর্মকর্তাদের সংযুক্ত করা হয়েছে।
এ কমিটি সর্বশেষ বৈঠক করেছে ২৯ অক্টোবর। আশা করা হচ্ছে, আরও ২-৩ বৈঠক হওয়ার পর নীতিমালা চূড়ান্ত হবে। ইতোমধ্যে খসড়া আকারে যা চূড়ান্ত করা হয়েছে সেখানে নীতির সারমর্ম চলে এসেছে। এখন শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ঘষামাজার কাজ চলছে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বাদ পড়েছে কিনা বা কোথাও কোনো ফাঁক-ফোকর থাকলে সেটি বন্ধ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, এ নীতিমালা প্রণয়নের পেছনে বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ব্যাপক অবদান রয়েছে। তারা যথাযথ পরামর্শ দিয়ে চূড়ান্ত হতে যাওয়া নীতিমালাকে আরও সমৃদ্ধ করেছেন। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এছাড়া জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন সব সময় এটি মনিটরিং করছেন। তারা মনে করেন, এ নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে বেশিরভাগ কর্মকর্তা খুশি হবেন।
পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আরো শক্ত ভিত অর্জন করবে এবং প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়নে আরও বেশি সক্রিয় হতে পারবে। শুধু নানা রকম প্রভাব খাটিয়ে যারা এতদিন ফায়দা নিয়ে আসছেন তাদের পথ রুদ্ধ হবে। কর্মকর্তাদের মধ্যে পর্দার আড়ালে গড়ে ওঠা কথিত কোনো নেতা কিংবা বিশেষ গ্রুপের ভূমিকা রাখার সুযোগও চিরতরে বন্ধ হবে। কর্মস্থলে সবাই প্রাপ্য মর্যাদা নিয়ে কাজে আরও বেশি মনোনিবেশ করতে পারবেন।
বিশেষ করে চেইন অব কমান্ড শতভাগ অক্ষুণ্ন থাকবে। তারা বলেন, এজন্য নীতিমালার কোথাও তদবিরের কোনো সুযোগও রাখা হচ্ছে না। কেননা, ন্যূনতম সুযোগ রাখলেই বিপদ। তখন নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। কোনোভাবে আর বাস্তবায়ন করা যাবে না। উদাহরণস্বরূপ, কোথাও যদি ২০০ জন লোককে বিশেষ অনুদান দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়, দেখা যাবে সেখানে কমপক্ষে ২ হাজার লোক এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন।
ঠিক তেমনি বদলি পদায়নের জন্য যদি বিশেষ কোনো সুযোগ রাখা হয়, তাহলে দেখা যাবে ওটা আর বিশেষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এজন্য বাইপাস সার্জারির কোনো পথ আমরা খোলা রাখছি না। রাখলে দেখা যাবে, সবাই ওই বাইপাস দিয়ে ঢুকে পছন্দের পোস্টিং হাতিয়ে নিচ্ছেন। এছাড়া তদবির এমন একটি বিষয়, যার লিংক আছে সে ব্যক্তিস্বার্থে সেটি ব্যবহার-অপব্যবহার সবই করবে। তাই এখন আমরা যেভাবে নীতিমালা করছি, সেখানে ঘুরেফিরে ভালো-মন্দ মিলে সব পদে সবাইকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত কাজ করতে হবে।