সাজেদুর রহমান সবুজ, শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার শাজাহানপুরে শাহ্ নগর ও আশপাশের গ্রামে গড়ে ওঠা নার্সারি পল্লীতে শুরু হয়েছে শীতকালীন সবজি চারা কেনাবেচার ধুম। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন নার্সারি মালিক ও শ্রমিকরা। দূর-দূরান্ত থেকে চারা কিনতে আসা চাষিদের পদরাচণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে চারার নগরখ্যাত শাহ্নগর ও আশপাশ এলাকার নার্সারি পল্লী।
এবছর প্রতি হাজার হাইব্রিড মরিচের চারা ৮শ’ থেকে ১২শ’ টাকা, বেগুনের চারা ৬শ’ টাকা এবং ফুলকপির চারা ৯শ’ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বাঁধাকপি ও টমেটোর চারা উৎপাদনের কাজ চলছে। এসব চারা মিলবে মাসখানেক পরে। দূর থেকে চারা কিনতে আসা সবজি চাষিদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাও করছেন নার্সারি মালিকরা। এছাড়া বিকাশ/নগদ-এ টাকা পাঠানোর পর কুরিয়ার সার্ভিস এবং দুরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসের মাধ্যমে ক্রেতার কাছে চারা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাঙ্খিত জাতের চারা পেতে অগ্রিম বুকিং দিচ্ছেন অনেকেই। হাইব্রিড মরিচের জনপ্রিয় জাতগুলো হলো গ্রিন সুপার, বিজলী, বিজলী প্লাস, স্টার প্লাস, লাইট মাস্টার, লঙ্কা ১৮২০, বেগুনের জনপ্রিয় জাত আলতাববাদ, মেন্টল, ভেঞ্চুরা, গ্রিনবল, ফুলকপির জনপ্রিয় জাত রাইস বক্স, লিডার, ক্যাপ্টিন, হোইট মার্বেল ইত্যাদি।
বছরজুড়ে সবজি চারা উৎপাদন হচ্ছে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার শাহ্নগর ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামে। এ এলাকায় অবস্থিত দুই শতাধিক নার্সারিতে প্রায় ৬ কোটি চারা উৎপাদন হয়েছে। এসব চারা ছড়িয়ে পড়ছে ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, জামালপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদি, নাটোর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, লালমনির হাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, সিলেট, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানসহ ২৪ জেলায়। মাটির বেডে চারা উৎপাদনের পাশাপাশি নেট হাউজে চারা উৎপাদনের আধুনিক কৌশলও রপ্ত করেছেন স্থানীয় নার্সারি মালিকরা। শাজাহানপুরের সবজি চারা উৎপাদনকারীরা হাইব্রিড মরিচ, ফুলকপি, বেগুন, বাঁধাকপি, টমেটো, করলা, হাইব্রিড পেঁপে, পেঁয়াজসহ সব ধরণের সবজির উন্নতমানের চারা উৎপাদন ও বিপণন করছেন। হাইব্রিড মারিচ, ফুলকপি ও বেগুনের চারা উৎপাদন আষাঢ় মাসে শুরু হয়ে চলে কার্তিক মাস পর্যন্ত। একই বেডে ৩-৪ দফা চারা উৎপাদন করা হয়। আশ্বিন মাসে শুরু হয় টমেটো, বাঁধাকপি, পেঁপে ও করলা চারা উৎপাদন। এছাড়া কার্তিক মাসে চলে পেঁয়াজের চারা উৎপাদনের কাজ। সব মিলিয়ে সারা বছরই চলছে সবজি চারা উৎপাদনের কর্মযজ্ঞ।
সবজি চারা কিনতে আসা সিরাজগঞ্জ জেলার শিমলা গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের জানিয়েছেন, তিনি গত বছর ৬৪ শতক জমিতে ফুলকপি চাষ করে আড়াই লাখ টাকা এবং ৫৮ শতক জমিতে বেগুন চাষ করে ৩ লাখ টাকা লাভ করেছেন।
৩৭ বছর আগে শাহ্নগর গ্রামে সব্জি চারা উৎপাদনের সূচনা করেন ওই গ্রামের ১৪ বছর বয়সী কিশোর আমজাদ হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, মাঠ ফসলের চেয়ে চারা উৎপাদন লাভজনক হওয়ায় দীর্ঘ কয়েক বছরে শাহ্নগর ও এর আশপাশের এলাকায় দুই শতাধিক নার্সারি গড়ে উঠেছে। নারীসহ ৩ সহস্রাধিক কৃষি শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। নার্সারি পল্লীকে ঘিরে শাহ্নগর ও আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে বীজ, কীটনাশক ও সারের ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
শাজাহানপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূরে আলম জানিয়েছেন, চারা উৎপাদনকে গুরুত্ব দিয়ে বীজ, মাটি ও চারা শোধনসহ সুষম সার, রোগ-পোকা দমনে প্যাকেজ আকারে চারা উৎপাদন প্রযুক্তি কৃষকদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।