মক্কায় ইসলাম প্রচারকালে রাসুল (সা.) বিভিন্ন অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হতেন। সব রকমভাবে বাধা-বিপত্তি দেয়া হতো তাকে।
মক্কার লোকদের থেকে তিনি ভালো আচরণ না পেলেও দূরবর্তী মদিনার লোকেরা মহানবীর ডাকে সাড়া দিতে থাকেন। প্রতি বছর হজের মৌসুমে মদিনাবাসীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
পর্যায়ক্রমে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকায় তাদের কাজকর্ম দেখভালের জন্য এবং তাদের ধর্মীয় বিষয়াদি শেখানোর জন্য একজন শিক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন নবী।
হিজরতের পূর্বে রাসুল (সা.) হজরত মুসআব ইবনে উমায়ের (রা.)-কে রাষ্ট্রদূত ও মদিনার মুসলমানদের শিক্ষক হিসেবে ইয়াসরিবে (মদিনার প্রাচীন নাম) প্রেরণ করেন। রাসুল (সা.)-এর মদিনা আগমনের আগে এক বছর যাবত মুসআব (রা.) মদিনার মুসলমানদের সার্বিক দেখাশোনা ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করেন। তাদের মাঝে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।
উল্লেখ্য যে, তখন ইসলামের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হলেও মুসলিম ঐতিহাসিকরা হজরত মুসআব (রা.)-কে ইসলামের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।
মুসআব (রা.)-এর জন্ম
হিজরতের ২৭ বছর আগে তিনি মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বংশ ছিল কোরাইশের অভিজাত শ্রেণীর বনি আবদুদ্দার। তিনি ছোটবেলা দেখে বেশ আদর-যত্ন ও বিলাসিতায় বেড়ে ওঠেন।
ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি তৎকালীন চার হাজার দেরহাম মূল্যের জামা গায়ে দিতেন। উন্নতমানের সুরভি ব্যবহার করতেন। তিনি কোনো রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে সে পথ ঘ্রাণে আমোদিত হয়ে যেত। পথিক যাওয়ার সময় ঘ্রাণ পেয়ে বুঝতে পারতেন এ পথ দিয়ে মুসআব হেঁটে গেছেন।
তিনি বেশ সুদর্শন ও সুঠামদেহী ছিলেন। বন্ধুদের সাথে ভালো গান করতেন। কণ্ঠস্বর ছিল বেশ কোমল ও হৃদয়গ্রাহী।
ইসলাম গ্রহণ ও মৃত্যু
ইসলামের সূচনাপর্বেই মুসআব ইসলাম গ্রহণ করেন। মুসলমান হওয়ার কারণে তার পরিবার, সমাজ ও আত্মীয়রা তাকে পৈশাচিক নির্যাতন করে। পরে রাসুল (সা.)-এর আদেশ পেয়ে তিনি ইথোপিয়ায় হিজরত করেন। ইথোপিয়া থেকে ফিরে এসে মদিনায় প্রিয়নবী (সা.) কর্তৃক নিয়োগ পান।
তৃতীয় হিজরিতে উহুদের যুদ্ধে মুসআব (রা.) মুসলমানদের পতাকা বহন করেন। বীরদর্পে সংগ্রাম ও প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন করেন। কাফেররা যখন রাসুল (সা.)-এর ওপর হামলা করতে আসে তখন তিনি দুর্দমনীয়ভাবে তাদের প্রতিহত করেন। কিন্তু প্রতিহত করতে করতে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন।