সুত্রঃ জাস্ট নিউজঃ টুনটুনির মন ভীষণ খারাপ। সকালে ঠিকমতো ঘুমাতে না পারলে সবারই কম-বেশি মন খারাপ হয়। তাও আজ টুনটুনির হাতে কোনো কাজ ছিলো না। কাজ যেহেতু ছিল না, অতএব সে একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠতেই পারে। কিন্তু না, কাক তার ঘুমের বারোটা বাজিয়েছে। বাসার পাশে বসে এমন কর্কশ স্বরে কা-কা... করেছে যে, সে রীতিমতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।
কাক যে এই কান্ড আজই প্রথম করেছে- তা নয়। দু'দিন পরপরই করছে। সবাই ওর উপর বিরক্ত।
নাহ্, এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। তাহলে কাকের সাহস আরও বেড়ে যাবে। আজই এর একটা সমাধান করতে হবে। টুনটুনি ফিঙের সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে কথা বললো। ফিঙে আগে থেকেই কাকের ওপর রেগে ছিলো। টুনটুনির ঘুম ভাঙার কথা শুনে আরও রেগে গেলো। পাশ দিয়েই যাচ্ছিলো শালিক। কী হয়েছে- জিজ্ঞেস করতে করতে সে টুনটুনি ও ফিঙের পাশে এসে বসলো। সব শুনে সে ফিঙেকে বললো, 'শত হলেও কাক আমাদের পাড়া প্রতিবেশী। ওর ওপর আমরা যদি রাগ করি, তাহলে সে কোথায় যাবে? কার সঙ্গে মিশবে?'
ফিঙে অনেকক্ষণ চুপ থেকে বললো, 'তা অবশ্য ঠিকই বলেছো। কিন্তু আমাদেরই বা কী করার আছে, বলো? আজ বিকট শব্দে ডাকাডাকি করে টুনটুনির ঘুম ভাঙিয়েছে, আরেকদিন আমার বাচ্চাকে ভয় দেখিয়েছে। এসব কি ঠিক? তুমিই বলো!'
শালিকের মাথায় একটা বুদ্ধি এলো- 'আচ্ছা, এক কাজ করলে কেমন হয়? কাককে যদি আমরা গান শিখতে বলি?'
শালিকের কথাটা ঠিক বুঝতে পারলো না টুনটুনি ও ফিঙে। তাই শালিক আরেকটু ভেঙে বললো- 'কাককে নিয়ে তো আমাদের কোনো সমস্যা নেই, তাই না? সমস্যা হচ্ছে ওর কর্কশ কণ্ঠ নিয়ে। ওর কণ্ঠটা যদি কোকিলের মতো সুন্দর হতো, তাহলে আমরা কেউ-ই ওর ডাক শুনে বিরক্ত হতাম না। অতএব, এসো আজই কাককে গান শিখতে বলি। গান শিখতে হলে ওকে নিয়মিত গলা সাধতে হবে। এতে ওর গলার কর্কশ স্বরটা এমনিতেই চলে যাবে।'
শালিকের কথাগুলো বেশ পছন্দ হলো টুনটুনি আর ফিঙের। তারা তখনই ডাকলো কাককে। আর বললো, আগামী এক মাসের মধ্যে যেন সে গান শেখে। তার কর্কশ কণ্ঠের ডাকাডাকির কারণে সবার কী সমস্যা হচ্ছে- সে কথা তো বললোই।
সব শুনে কাকের খুব অনুশোচনা হলো। তার জন্য অন্যদের সমস্যা হবে, এটা সে আর হতে দেবে না। তখন থেকেই সে গান শেখার জন্য খোঁজ করতে লাগলো কোকিলের। খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও গেলো একটা কোকিল। কিন্তু কাক তার দিকে উড়ে যেতেই সে এমন জোরে উড়াল দিলো যে, এলাকা ছেড়ে চলে গেলো। সে ভাবলো, কাকের বাসায় ডিম পাড়ার অপরাধে কাক তার দিকে তেড়ে আসছে!
এরপর কাক আরও যতো কোকিলের দেখা পেলো, সবাই একইভাবে পালিয়ে গেলো। কাক বুঝতে পারলো, তার গান শেখা হবে না। এদিকে আবার প্রতিবেশীরা তার ওপর রেগে আছে। সে এখন কী করবে? শেষ পর্যন্ত কাক সিদ্ধান্ত নিলো, এই এলাকা ছেড়েই চলে যাবে। এমন একটা এলাকায় যাবে, যেখানে কেউ তার ডাক শুনে বিরক্ত হবে না।
সেদিন থেকেই কাকটাকে আর দেখা গেলো না। টুনটুনি আর ফিঙে মনে মনে খুশিই হলো।
কিন্তু তাদের এই খুশি বেশিদিন থাকলো না। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে, বাসার কাছে কী যেন একটা মরে পড়ে আছে। ইঁদুর, চিকা অথবা এ জাতীয় কিছু একটা। উফ, কী বাজে গন্ধ! সবার দম আটকানোর জোগাড়। এখানে বেশিক্ষণ থাকলে দুর্গন্ধের চোটে অজ্ঞান হয়ে যেতে হবে। অতএব, এখান থেকে না সরে উপায় নেই। নিজেদের বাসা ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেলো টুনটুনি, ফিঙে আর শালিক। পরিবেশটা যদিও ভালো, তবু খুব কষ্ট হচ্ছিলো তাদের। নিজের বাসা ছেড়ে চলে গেলে কার না কষ্ট হয়!
হঠাৎ তারা দেখতে পেলো সেই কাকটার। তাদের মন আরও খারাপ হয়ে গেলো। এক বিপদ থেকে বাঁচতে এসে কিনা আরেক বিপদের হাতে পড়েছে! তারা মুখ ফিরিয়ে নিলেও কাক তাদের সঙ্গে যেচে কথা বললো। কথায় কথায় যখন জানতে পারলো, তারা দুর্গন্ধের কারণে বাসা ছেড়ে চলে এসেছে, তখন সে বললো, 'চলো আমার সঙ্গে।'
অনেকটা জোরাজুরি করেই সবাইকে নিয়ে তাদের বাসার কাছে এলো কাক। এসেই আর কোনো কথা নেই, দুর্গন্ধযুক্ত জিনিসটা ঠোঁট দিয়ে ধরে নিয়ে মাটির নিচে পুঁতে ফেললো সে। সঙ্গে সঙ্গে দুর্গন্ধ উধাও! কাক বললো, 'আমি এবার যাই। আবার যদি কখনও এই ধরনের সমস্যা হয়, আমাকে খবর দিও।'
কাকের কথা শুনে খুব লজ্জা পেলো টুনটুনি, ফিঙে আর শালিক। তারা কাককে যেতে দিলে তো!