এবারের গ্রন্থমেলা উৎসর্গ করা হয়েছে সদ্যপ্রয়াত ভাষাসংগ্রামী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে।
রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্র-শনিবারসহ সরকারি ছুটির দিনগুলোতে মেলার দ্বার খুলে যাবে সকাল ১১টায়; চলবে একটানা রাত ৯টা পর্যন্ত।
বাংলা একাডেমির সভাপতি প্রফেসর আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।
এবারই প্রথম বইমেলাকে সম্প্রসারিত করে নেয়া হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। একাডেমী প্রাঙ্গণে মেলার উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও মেলার স্টল ঘুরে দেখেন। প্রধানমন্ত্রী মেলা থেকে চলে যাবার পরই মেলা প্রাঙ্গণে এসে ভীড় জমান বই-প্রেমীরা। মেলার প্রথম দিন হওয়াতে দর্শকদের খুব একটা সমাগম হয়নি। তবে মেলা প্রাঙ্গণ মুখর ছিলো কবি, সাহিত্যিক, গল্পকার, ঔপন্যাসিক ও সাহিত্যকর্মীদের উপস্থিতিতে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় অবদানের জন্য ১১ জনকে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। কবিতায় হেলাল হাফিজ, কথাসাহিত্যে পূরবী বসু, প্রবন্ধে মফিদুল হক, গবেষণায় জামিল চৌধুরী ও প্রভাংশু ত্রিপুরা, অনুবাদে কায়সার হক, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যে হারুণ হাবীব, আত্মজীবনী,স্মৃতি কথা, ভ্রমণ কাহিনীতে মাহফুজুর রহমান, বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও পরিবেশে শহীদুল ইসলাম এবং শিশু সাহিত্যে কাইজার চৌধুরী ও আসলাম সানী এ বছর পুরস্কার পেয়েছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বাংলা ভাষাকে হৃদয়ে লালন করতে হবে। বাংলা ভাষার চর্চা করতে হবে। একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
তিনি বলেন, বই মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেয়ার ফলে তা আরো সমপ্রসারিত হয়েছে। সেখানে আমাদের বিজয় স্তম্ভ রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেখানেই ৭ মাচের্র ভাষণ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোহাম্মদ আলী জিন্নার উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা ঘোষণা করতে চাইলে তার প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশীরা। ভাষার জন্য রফিক, সালাম, বরকতসহ আরো অনেকে ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে। তিনি বলেন,ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান রয়েছে। আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি গ্রেফতারও হয়েছেন।
এবার মেলায় একাডেমির প্রাঙ্গণে শিশুতোষ প্রকাশনা সংস্থা, সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক-সামাজিক-গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে। এখানে মেলামঞ্চে থাকছে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অপরদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পুস্তক প্রকাশনা সংস্থাগুলোকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
গ্রন্থমেলায় মোট ২৯৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৩৪টি ইউনিট স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে ২৩২টি প্রকাশনা সংস্থাকে ৪৩২টি ইউনিট, বাংলা একাডেমির ভেতরে ২৪টি শিশু-কিশোর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৩৩টি ইউনিট এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান-গণমাধ্যম ও অন্যান্য ৪৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৯টি ইউনিট স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এবার উন্মুক্তসহ ৫৫টি লিটল ম্যাগাজিনকে লিটলম্যাগ কর্নারে জায়গা করে দেওয়া হয়েছে। লিটলম্যাগ কর্নারটি উৎসর্গ করা হয়েছে প্রয়াত কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেনকে।