উত্তর বঙ্গের প্রাণকেন্দ্র বগুড়া শহরের মহাস্থানগড় উপকূলবর্তী উর্বর ভূমির বুক চিরে প্রবাহিত হয়ে চলছে ঐতিহ্যবাহী করতোয়া নদী। কালগর্ভে এটি নিস্তেজ প্রায় বলা যায়। তবে বর্ষাকালে নদীটি পানি দ্বারা কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়। ভোরবেলা অনেক লোকের ¯œান করা, নদী গর্ভে জাল পেতে মৎস্য শিকার, পানকৌড়ি ও
জলহংসীর জলকেলীর দৃশ্য অবলোকন করলে, মনে হয় করতোয়া অদ্যবধিও পূর্ণ যৌবনে সমসীন। করতোয়ার ঠিক সন্নিকটে অবিস্থিত সবুজ-শ্যামল ছায়াঘেরা শান্তিময় একটি পল্লী। শান্তিময় পল্লীতে হিন্দু-মুসলিম জাতি সম্মিলিত ভাবে বসবাস করে। তাইতো কখনো শুনা যায় মসজিদে মুয়জ্জিনের আযানের সুর ধ্বনি আবার কখনো শুনা যায় মন্দিরে উলো ও শংক ধ্বনি, সেই সাথে পাখিদের কলকাকলি সবকিছু মিলে পল্লী ছিল মুখরিত। পল্লীর অভ্যন্তরে প্রভাবশালী জমিদার পরিবার। জমিদার পরিবারের একমাত্র কন্যা নিতু। সে ছিল পরিবারের সবার নয়ন মণ্ িনিতু পল্লীর একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেনীতে পড়ালেখা করে। পড়ালেখা সংস্পর্শে নিতু, তপু নামে একটি ছেলের সঙ্গে মিশতে শুরু করে। তপু ছিল উক্ত পল্লীর দরিদ্র পরিবারের নিষ্ঠা ও আদর্শবান ছেলে । তপু ছিল সর্বদা ডানপিটে স্বভাবের । তপুর ডানপিটে স্বভাব নিতুকে মুগ্ধ করে ও তীব্র ভাবে অন্তঃ করণে নাড়া দেয়। তপুকে আরো কাছে পাওয়ার স্পৃহা নিতুর জাগে। সময়ের বেড়াজাল একসময় নিতু ও তপুর সম্পর্কের উপর প্রকটভাবে প্রভাব ফেলে, তারা একে অপরের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে। কেউ কাউকে দূরত্বে রাখতে চায় না। তাইতো স্কুল ছুটির সঙ্গে সঙ্গে, পরের দিন স্কুলে যাওয়ার প্রহর গুণে দুজনে। এক পলক না দেখলে ভালবাসার বিরহ জ্বালা এত তীব্র হবে, তারা কখনো ভাবেনি। নিতু ও তপু তাদের ভালবাসার বিরহ জ্বালা নিঃশেষ করার লক্ষ্যে বন্ধুদের সার্বিক সহযোগিতায় বিয়ে করে ফেলে। বিয়ের বিষয়টা সবার অগোচরে ছিল বলে কেউ বুঝতে পারেনি। কিন্তু বিষয়টা যখন নিতুর পরিবার জানতে পারে, তখন নিতুর স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। মুঠোফোন তখন নিতু ও তপুর যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। একদিন নিতু ও তপু সিদ্ধান্ত নেয় তারা পালিয়ে দূরে কোথাও চলে যাবে। আর এ সিদ্ধান্ত তাদের বন্ধুদের অবগত করে । নিতু ও তপুর বন্ধুরা তাদের অকৃত্রিম ভালবাসার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তাদের পালাতে সাহায্য করে। কিন্তু বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলেও পথিমধ্যে নিতুর চাচার সম্মুখে পড়ে ডায়। চাচার দৃষ্টি কেড়ে তপু ও নিতু আখক্ষেতে আতœগোপন করে। অনেক অন্বেষন করে নিতুর পরিজনরা ব্যর্থ হয়ে সন্ধ্যঘনার কারণে বাড়ি ফিরে। তার বন্ধুরা বিপদ কিছু সময়ের জন্য কেটে গেছে ভেবে, তাদের জানায়। নিতু ও তপু বন্ধুদের নিকট চলে আসে। বন্ধুরা নিতু ও তপুকে গাড়িতে উঠাইয়া দেয়। কিন্তু নিয়তির পরিহাস গাড়ি চালক ছিল তপুর জ্ঞাতি সম্পর্কে আতœীয়। সে তপুকে আড়াল করে রাখে এবং লোভে পড়ে নিতুর বাড়ীতে খবর দেয়। নিতুকে তার পরিজনরা বাড়ীতে নিয়ে আসে। সেই সাথে নিতুর মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয় । তপু কোন উপায় না দেখে নিতুর নিকট চিঠি লিখে। তপুর চিঠি নিতুর মায়ের হস্তে পড়ে। নিতুর মা চিঠি পড়ে নিতুকে ব্যপক মারধর করে। নিতু নিশ্চুপভাবে ¯œানাগারে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ পর নিতুর মা দেখে নিতু অজ্ঞান অচস্থায় পড়ে আছে। যতদ্রুত সম্ভব নিতুকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসারত ডাক্তার জানায় নিতু হার্পিক সেবন করেছে। ঠিক তার কয়েক ঘন্টা পর নিতু শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে অবনী থেকে। অপর দিকে নিতুর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে অপূর্ণ ভালবাসার শোকে মানসিক রোগে ভুগছে তপু........। জানিনা নিষ্পাপ ও প্রকৃত ভালবাসার পরিণতি কী? তপুর মত মানসিক রোগে আক্রান্ত ও নিতুর মত করুণ মৃত্যু...........।