চেতনা বার্তা ডেস্কঃ রাজধানীর অন্যতম পাইকারি বাজার মৌলভীবাজার। প্রধান সড়কের পাশের প্রায়
সব দোকান বন্ধ। কেবল বাজারের ভেতরের দোকানগুলো খোলা। তাও পণ্যের দাম বেশি।
পাইকারি বাজারের এই দামের প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে।
১৮-দলীয় জোটের ৮৪ ঘণ্টা হরতাল চলাকালে সোম ও মঙ্গলবার মৌলভীবাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া যায়।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে এই বাজারে বিভিন্ন পণ্য কিনতে এসেছিলেন খুচরা
ব্যবসায়ী আবু হানিফ। তিনি বলেন, ‘আমদানি করা পেঁয়াজ সোমবার কিনেছি ৯০ টাকা
কেজি। আজ এসে দেখছি ৯৫ টাকা। এ ছাড়া আদা ও রসুনের দামও বাড়তি। এক দিনের
ব্যবধানে অধিকাংশ জিনিসের দাম বেড়েছে। তাই বেশি দামে বেচতে হবে। আবার বাড়তি
দাম চাইলে ক্রেতারা খেপে যান।’
মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী কামাল স্টোরের মালিক মো. জামাল উদ্দিন হরতালে
জিনিসের দাম বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, বৃহত্তম কাঁচামালের
আড়ত শ্যামবাজারে সোমবার রাতে প্রতি কেজি আলু ২০ টাকা দরে কিনতে হয়েছে
তাঁকে। গতকাল মঙ্গলবার তিনি প্রতি কেজি আলু ২৩ টাকা বিক্রি করেছেন। এ ছাড়া
আমদানি করা আদা, রসুন ও পেঁয়াজও এক দিনের ব্যবধানে কেজিতে পাঁচ টাকা বেশি
দামে কিনতে হয়েছে।
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, হরতালের কারণে
দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাক আসছে না রাজধানীতে। দু-একটি যা আসছে, সে
জন্য দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে। ফলে পণ্যের দামে এর প্রভাব পড়ছে।
আবদুর রাজ্জাক আরও বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সরকারি ও বিরোধী দলের
সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে বৈঠক করা হয়েছে। এতে হরতালের মতো কর্মসূচি না দেওয়ার
অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা? সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।
সাধারণ মানুষের কথা কেউ ভাবে না।’
এদিকে ব্যবসায়ীরা জানান, গত শুক্রবার থেকে মঙ্গলবারের মধ্যে পেঁয়াজ,
রসুন, আলু, শুকনো মরিচ, আদার দাম কেজিপ্রতি প্রায় পাঁচ থেকে ২০ টাকা
পর্যন্ত বেড়ে গেছে। কেবল এক দিনের ব্যবধানে (সোম ও মঙ্গলবার) কোনো কোনো
পণ্যের দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা। তাঁরা জানান, হরতালের কারণে শ্যামবাজারের
মোকামে পণ্যবাহী ট্রাক ঢুকছে না। দু-একটি যা আসছে তা দিয়ে ব্যবসায়ীদের
চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। আর তাই বেশি দামে বিভিন্ন পণ্য কিনতে হচ্ছে
তাঁদের।
ব্যবসায়ীরা জানান, শুক্রবারের তুলনায় গতকাল মঙ্গলবার প্রতি কেজি আলুর
দাম অন্তত সাত টাকা বেড়েছে। গতকাল এক কেজি আলু ২৩ টাকা দরে বিক্রি করেছেন
তাঁরা। এ ছাড়া শুক্রবার যে দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল গতকাল তার
দাম ছিল ১০০ টাকা। আর ৮৫ টাকার আমদানি করা পেঁয়াজের দাম দাঁড়ায় ৯৫ টাকায়।
অন্যদিকে ৫০ টাকার দেশি রসুন ৭০, ৬০ টাকার আমদানি করা রসুন ৮০, ৮০ টাকার
দেশি আদা ১০০ ও ১২০ টাকার আমদানি করা আদা ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
এ ছাড়া চার দিনের ব্যবধানে বিভিন্ন প্রকার ডালের দাম কেজিতে প্রায় পাঁচ
টাকা বেড়েছে বলে মৌলভীবাজারের তারা স্টোরের মালিক মো. নাঈম উদ্দিন জানান।
তবে মসলার দাম স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার এই প্রভাব খুচরা বাজারেও পড়তে দেখা যায়।
গতকাল কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে গিয়ে খুচরা বাজারে এক
কেজি আলু ২৩ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়, যা হরতালের আগের দিনই ছিল
১৫ টাকা। এ ছাড়া দেশি পেঁয়াজ ১০৫, আমদানি করা পেঁয়াজ ১০০, দেশি রসুন ৭৩
থেকে ৭৫, আমদানি করা রসুন ৮৫, দেশি আদা ১১০, আমদানি করা আদা ১৪০ থেকে ১৫০
টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। পাশাপাশি সব ধরনের সবজির দামও দেড় থেকে
দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন
কবির প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, হরতাল হলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে আগুন
লাগে। পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও সব ধরনের সবজির দাম মানুষের নাগালের বাইরে চলে
যায়। ফলে বাজারে গিয়ে এক প্রকার ঝামেলায় পড়ে যান ভোক্তারা। তিনি বলেন,
‘বিদ্যমান রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য এবং হরতালের মতো কর্মসূচি না
দেওয়ার জন্য আমরা সরকার ও বিরোধী দলের কাছে অনুরোধ জানাই।’