ধুনট বগুড়া : বগুড়ার ধুনট উপজেলায় একটি ধর্ষণ মামলার আলামত নষ্টের অভিযোগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধুনট থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালাকে ওই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মামলার বাদি ওসির বিরুদ্ধে আলামত নষ্টের অভিযোগ এনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বগুড়ার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগটি আমলে নিয়ে ওসিকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল রশিদকে এর প্রধান করে এ অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বর্তমানে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে। গত বৃহস্পতিবার মামলার তদন্তভার ডিবিকে বুঝিয়ে দিয়েছেন ওসি কৃপা সিন্ধু বালা।
বাদির লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ধুনট থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা নিজেই। ১৮ মে আসামি মুরাদুজ্জামানকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে তার হেফাজত থেকে আরও একটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়। ওই মুঠোফোনে পাওয়া কয়েকটি অশালীন ভিডিও ক্লিপ সিডিতে কপি করে নেন ওসি। এসব সিডি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠানোর কথা। সিডিগুলো না পাঠিয়ে শুধু উদ্ধার হওয়া দুটি মুঠোফোন সিআইডিতে পাঠিয়েছেন। আসামিপক্ষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে ওসি কৃপা সিন্ধু বালা মামলার আলামত নষ্ট করেন। গত ১৯ মে জব্দ করা মুঠোফোন দুটি তিনি আদমদীঘি থানার একজন উপপরিদর্শকের কাছে পাঠিয়ে ফোনে থাকা সব ভিডিও ক্লিপ ও তথ্য মুছে ফেলা হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার জালশুকা হাবিবর রহমান ডিগ্রি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের শিক্ষক মুরাদুজ্জামান ওরফে মুকুলকে (৪৮) গত বছরের অক্টোবরে ধুনট উপজেলার একটি এলাকায় বাসা ভাড়া নেন। সেখানে তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। ওই বাসার মালিকের মেয়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। ওই ছাত্রীর মা-বাবা পেশাগত কারণে বেশিরভাগ সময় বাসার বাইরে থাকেন। এই সুযোগে মুরাদুজ্জামান একদিন কৌশলে ওই স্কুলছাত্রীকে জড়িয়ে ধরে মুঠোফোনে ছবি তোলেন। এরপর ওই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে কয়েকবার ধর্ষণ করেন। ১২ মে আবারও ধর্ষণের চেষ্টা করলে ওই ছাত্রী চিৎকারে দেয়। এ সময় স্বজনেরা ছুটে এলে মুরাদুজ্জামান পালিয়ে যায়। এরপর ওই ছাত্রীর কিছু অশালীন ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয় মুরাদুজ্জামান। পরে ওই ছাত্রীর মা বাদি হয়ে তার বিরুদ্ধে গত ১২ মে ধুনট থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় পুলিশ মুরাদুজ্জামানকে গ্রেফতার ও অশালীন ভিডিও ধারণ করা মুঠোফোন জব্দ করে। মুরাদুজ্জামান বর্তমানে বগুড়া কারাগারে রয়েছে।
ধুনট থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা জানান, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। মামলাটির তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। এরপরও তদন্ত যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে জন্য পুলিশ সুপারের নির্দেশে তদন্তভার ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।