চেতনাবার্তা ডেস্ক: বগুড়ার ধুনট উপজেলায় শিশু তাবাসসুমকে গণধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় জড়িত ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। আটকরা হলেন উপজেলার নশরতপুর গ্রামের তোজাম্মেল হকের ছেলে বাপ্পী আহম্মেদ, দলিল উদ্দিন তালুকদারের ছেলে কামাল পাশা, ছানোয়ার হোসেনের ছেলে শামীম রেজা এবং মৃত সাহেব আলী শেখের ছেলে লাবলু শেখ। এদের মধ্যে বাপ্পী ধুনট জিএমসি ডিগ্রি কলেজের বিএ ২য় বর্ষের ছাত্র, কামাল পাশা পেশায় মুদি দোকানদার, শামীম রেজা রাজমিস্ত্রি এবং লাবলু শেখ রংমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন।
পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা জানান, নিহত তাবাসসুম উপজেলার নশরতপুর গ্রামের বেলাল হোসেন খোকনের মেয়ে। আসামি বাপ্পীর পরিবারের সঙ্গে শিশু তাবাসসুমের বাবার পারিবারিক দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এ দ্বন্দ্বের জেরে তাবাসসুমকে হত্যা করে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন বাপ্পী।
জানা গেছে, গত ১৪ ডিসেম্বর নশরতপুর গ্রামে ইসলামী জালসা চলছিল। সেখানে তাবাসসুম তার দাদা-দাদি ও দুই ফুফুর সঙ্গে জালসা যায়। পরে অন্য শিশুদের সঙ্গে পাশের দোকানে বেলুন কিনতে যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাপ্পী রাত ৯টার দিকে জালসার পাশের দোকান থেকে বাদাম কিনে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে তাবাসসুমকে ফুসলিয়ে হাজী কাজেম জুবেদা টেকনিক্যাল কলেজে নিয়ে যায়। সেখানে বাপ্পী, কামাল, শামীম ও লাবলু তাবাসসুমের মুখ চেপে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে নিন্তেজ হয়ে পড়লে বাপ্পী গলাটিপে তাবাসসুমকে হত্যা করে। পরে কাটিং প্লাস দিয়ে হাতের আঙুল কাটে। যাতে সবাই মনে করে কোনো প্রাণীর কামড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। এরপর বাপ্পী তাবাসসুমের মরদেহ কাঁধে করে বাদশা নামে এক ব্যক্তির বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ে ফেলে রেখে যায়। যাতে বাদশার ছেলে রাতুলকে সবাই সন্দেহ করে। এরপর বাপ্পী বাড়িতে চলে গেলে বাকি তিনজন আসামি জালসায় গিয়ে ভলেন্টিয়ারের দায়িত্ব পালন করেন।
পুলিশ সুপার আরও জানান, তাবাসসুম বাসায় ফিরে না আসায় তার পরিবারের সবাই তাকে খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে রাত দেড়টার দিকে লোকজন তাবাসসুমের দেহ বাঁশঝাড়ে পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করে ধুনট থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এসময় তাবাসসুমের যৌনাঙ্গ দিয়ে রক্ত ঝরছিল এবং বুকে ও গালে কামড়ের দাগ ছিল। পরে ১৫ ডিসেম্বর তাবাসসুমের বাবা খোকন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুর রশিদের তত্ত্বাবধানে এবং শেরপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম নিরসলভাবে হত্যার রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করে। পরে গতকাল শুক্রবার রাতে আসামিদের আটকপূর্বক ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তাবাসসুমকে ধর্ষণের পর হত্যার কথা স্বীকার করে। আসামিদের আদালতে পাঠিয়ে ৮ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা ।