এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা গত এক বছরের বেশি সময় সরাসরি পাঠদানের বাইরে আছে। এ পরিস্থিতিতে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৬০ দিন ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৮৪ দিন ক্লাস করিয়ে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে নামলে এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর মধ্যে দিয়েই আবারও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ পরিস্থিতিতে সংক্রমণ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে জানতে চাইলে শুক্রবার (১১ জুন) ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও অন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, পরীক্ষা নেয়ার সব প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রাখছি। ইতোমধ্যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশিত হয়েছে। আমরা ২০২১ ও ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস দিয়েছে। সে সিলেবাস অনুসারেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আমরা সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।
এদিকে করোনা সংক্রমণ শুরু হলেও গতবছরের মার্চ মাসে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সবার সিলেবাস এখনো শেষ হয়নি। শহরাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করালেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের অনেকেই তার বাইরে ছিলেন। বিষয়টিতে নজর দিচ্ছে শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে অধ্যাপক নেহাল আহমেদ আরও বলেন, পাবলিক পরীক্ষা সবার পরীক্ষা। সব শিক্ষার্থী যাতে সমান সুযোগ পেয়ে এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। তাই, শিক্ষার্থীদের কিছুদিন ক্লাস করিয়ে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস করিয়েই পরীক্ষা নেয়া হবে।
এদিকে শিক্ষা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের দিয়েই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে চাই। সেরকম সিদ্ধান্তই নেয়া হয়েছে। তবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবার ক্লাস শুরু করতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে নামতে হবে।
তিনি আরও বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে না নামলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খোলার বিষয়ে মত দিয়েছে জাতীয় পরামর্শক কমিটি। তারাও ডাব্লিউএইচওর সুপারিশ উল্লেখ করে এ মত দিয়েছেন। তাই সংক্রমণের হার না কমলে কবে থেকে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস করানো হবে তা বলা যাচ্ছেনা।
এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস্টারভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফেরানোর বিষয়ে ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেন, এজন্য শিক্ষার্থীদের রোল নম্বর, বয়স এবং শাখাভিত্তিক ডিভিশনে ভাগ করা হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, একেকদিন একেক ক্লাস্টারের শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে আসবে। ক্লাস্টারের আওতায় পড়ে যেদিন শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা শ্রেণিকক্ষে আসবে না তাদের অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হবে। বাড়িতে বসে তারা অ্যাসাইনমেন্টের কাজ করবে। পাশাপাশি অনলাইনে ক্লাস করানো হবে।অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর সীমিত পরিসরে ক্লাসে উপস্থিত করাটাই হচ্ছে মূল লক্ষ্য। আর এটার কোনো বিকল্প নেই।
এদিকে অনলাইনে পাবলিক পরীক্ষা নেয়ার বিষয়েও চিন্তভাবনা শুরু করেছিল শিক্ষা প্রশাসন। সেজন্য তথ্য উপাত্ত সংগ্রহে একটি কমিটি করা হয়েছিল। তবে, বেশিরভাগ শিক্ষক শিক্ষার্থী অনলাইনে পাবলিক পরীক্ষা নেয়া সম্ভব নয় বলে মত দিয়েছেন।
এ বিষয়ে কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, অনলাইনে পাবলিক পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টি এ মুহুর্তে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বাস্তবায়ন কঠিন হবে। আমরা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে দেখেছি অনেক উন্নত দেশ তা করতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বা কোন প্রতিষ্ঠানে ক্লাস পরীক্ষা এ পদ্ধতিতে নেয়া সম্ভব হবে। তবে পাবলিক পরীক্ষা সবার পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় সব শিক্ষার্থীকে সমান সুযোগ দিতে হবে। ২৩ লাখ পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দেবে। অনলাইনে পরীক্ষা নিতে এ ২৩ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ল্যাপটপের ব্যবস্থা করতে হবে। স্মার্ট ফোনে পরীক্ষা নেয়া যাবে না। এরপর তাদের নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ দিতে হবে। আর পরীক্ষা নেয়ার আগে তাদের পরীক্ষা দেয়ার পদ্ধতি শেখাতে হবে। শিক্ষকদেরও এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ভবিষ্যতে অনলাইনে পাবলিক পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা করা যাবে কিনা এখনো বলা যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, কমিটি তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছে। সে অনুসারে প্রতিবেদন আমরা মন্ত্রণালয়কে পাঠাবো।