প্রবাস ডেস্ক
ভয় কে জয় করার প্রত্যয় ব্যাক্ত করার প্রয়াসে নভেম্বরের ফোবানা হবে উত্তর আমেরিকার প্রবাসীদের সর্ব বৃহদ মিলন মেলা। ফোবানার জমকালো মিট দ্যা প্রেসে ফোবানার হোষ্ট কমিটি কোভিড পরবর্তি শীতকালে একটি অন্য রকম ফোবানা উপহার দেবার ঘোষনা প্রদান করেন।
নতুন প্রজন্মের অঙ্গীকার স্লোগানে ‘অদম্য বাংলাদেশ-অবাক বিশ,’ ‘সবুজ জমিতে লাল বৃত্ত’ বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং মুজিববর্ষকে প্রবাসেও মহিমান্বিত করার সংকল্পে ফোবানা’র সর্বস্তরে ইস্পাতদৃঢ় ঐক্যের বন্ধন ঘোষণা দেয়া হলো ৩১ আগস্ট শনিবার ’মিট দ্যা প্রেস এন্ড ফোবানা লিডার্স’ থেকে।
তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের বিভিন্ন পর্বে থাকবে মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা ও সমাবেশ, বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে সেমিনার, বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশত বার্ষিকী-সমাবেশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছর পূর্তি উৎসব, বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে তথ্য-প্রযুক্তির অবদান, প্রবাস প্রজন্মের সমন্বয়ে সেমিনার, নৃত্য-নাট্য এবং সঙ্গীতানুষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার বিভিন্ন সিটি থেকে শতাধিক সংগঠন এতে অংশ নেবে বলে আয়োজকরা আশা করছেন।
৩৫ তম ফোবানা সম্মেলনের হোস্ট ‘আমেরিকান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি’ (এবিএফএস)র এ অনুষ্ঠানে জড়ো হয়েছিল ফোবানার বর্তমান কমিটির শীর্ষ কর্মকর্তা ছাড়াও সাবেক বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান। ছিলেন হোস্ট কমিটির সর্বস্তরের কর্মকর্তারাও। উল্লেখ্য, করোনা মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে ফোবানার আসন্ন বাংলাদেশ সম্মেলন লেবার ডে উইকেন্ড (সেপ্টেম্বরের ৩-৫) থেকে পিছিয়ে থ্যাঙ্কস গীভিং উইকেন্ডে (২৬-২৮ নভেম্বর) নেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ফোবানার নির্বাহী কমিটির মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। সেই মনোভাবের শান্তিপূর্ণ পরিসমাপ্তির ব্যাপারটি দৃশ্যমান হয়েছে এই ‘মীট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে। অভূতপূর্ব এক সম্প্রীতির মধ্যে এই অনুষ্ঠানে কাঁধে কাঁধ হাতে হাত মিলিয়ে বহুজাতিক এ সমাজে বাঙালিদের ঐক্য জাগ্রত সুসংহত করার কথা বললেন সকলে। একইসাথে হোস্ট কমিটির পক্ষ থেকেও এ যাবতকালের সবচেয়ে উত্তম একটি সম্মেলন উপহার দেয়ার অভিপ্রায়ে গৃহিত কর্মসূচিরও আলোকপাত করা হয়। জানানো হয়, দেশ ও প্রবাসের গুণীজনেরা আসবেন। বিশুদ্ধ বাঙালি সংস্কৃতি পরিবেশনের মধ্যদিয়ে নতুন প্রজন্মকে মা-বাবার সংস্কৃতির প্রতি আন্তরিক আগ্রহ তৈরীর বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে বলেও বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়।
হোস্ট কমিটির আহবায়ক জি আই রাসেল এর সভাপতিত্বে সদস্য-সচিব লেখক-সাংবাদিক শিব্বীর আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে ফোবানার নির্বাহী চেয়ারপার্সন জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, ৩৪ বছর আগে যেখান থেকে শুরু, সেই সিটিতেই বাংলাদেশের ঐতিহাসিক একটি মুহূর্তে ৩৫তম সম্মেলন হচ্ছে। সম্মেলনের প্রতিটি পরতে ধ্বনিত হবে বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী, মুজিববর্ষ। তাই এটিকে সর্বাত্মকভাবে সফল করতে হাতে হাত রেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকলেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে হোস্ট কমিটিকে সহায়তা করবেন এই কামনা করছি। যারা সম্মেলনের স্পন্সর হতে চেয়েছেন, আইকন হয়েছেন এবং নানাভাবে সহযোগিতার অঙ্গিকার করেছেন-তারাও যেন তা অবিলম্বে পূরণ করে হোস্ট কমিটির কাজের গতি ত্বরান্বিত করেন। জাকারিয়া আরো বলেন, ফোবানা সম্মেলনকে প্রবাসীদের মহামিলনমেলা হিসেবে অভিহিত করা হয়। সে কারণে আমরা কাউকে মাইনাসে বিশ্বাসী নই। সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পর্যায়ে সংলাপ অব্যাহত রয়েছে। অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও করেছি। সুতরাং থ্যাঙ্কসগীভিং উইকেন্ডের ফোবানার সাথে সকলেই সপরিবারে একিভূত হবেন এবং ফোবানার মূলচেতনা এগিয়ে নিতে আন্তরিক অর্থে সকলে সোচ্চার হবেন এ আশা করছি।
সাবেক চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা, একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক নূরন্নবী বলেন, করোনার ভীতি সত্বেও স্বল্প সময়ের নোটিশে এই অনুষ্ঠানে এসেছি শুধুমাত্র সকলকে দেখানোর জন্যে যে, আমরা ঐক্যবদ্ধ এবং আসন্ন ফোবানা সম্মেলনকে সার্থক করতে বদ্ধ পরিকর।
ফোবানার নির্বাহী সচিব মাসুদ রব চৌধুরী বলেন, করোনা ভীতির মধ্যে অনেকেই স্বাচ্ছন্দে চলাফেরায় মনোনিবেশ করিনি। এতদসত্বেও ক্যালিফোর্নিয়া থেকে বিভিন্ন পথ ঘুরে উড়ে এসেছি এই অনুষ্ঠানে। কারণ হচ্ছে আমরা ফোবানাকে ভালবাসী, সবাই এক পরিবারের সদস্য ভাবি। আসন্ন সম্মেলনকেও এযাবতকালের সেরা সম্মেলন করতে আসুন সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি।
দেড় দশকেরও অধিক সময় যাবত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব চালিয়ে আসা ফোবানার সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুব রেজা রহিম বলেন, যে প্রত্যাশায় ফোবানার যাত্রা শুরু হয়েছে, তারই পরিপূরক বিভিন্ন কর্মসূচি দেখছি এই সম্মেলনে। ‘অদম্য বাংলাদেশ-অবাক পৃথিবী’ এবং ‘সবুজ জমিতে লাল নৃত্য’ দেখে নতুন প্রজন্ম আমাদের সংস্কৃতি ধারণ ও লালনে উৎসাহিত হবে-এটা বলা যায় নির্দ্বিধায়।
সাবেক চেয়ারম্যান বেদারুল ইসলাম বাবলা বলেন, আমাদের সংস্কৃতি কিন্তু অনেক সমৃদ্ধ। তাই দীর্ঘ ৩৪ বছর থেকেই চেষ্টা করছি আমাদের বাঙালি সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি নতুন প্রজন্মেরর চিন্তা-চেতনা-ভাবনা-মননে প্রবাহিত এবং প্রতিস্থাপিত করতে। সে আলোকেই আসন্ন সম্মেলনে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। এগুলোকে সাফল্যমন্ডিত করতে আমাদের মধ্যেকার টিমওয়ার্ক আরো জোরদার করতে হবে। সে অঙ্গিকারই করে গেলাম।
ফোবানার সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ঐক্যবদ্ধ সম্মেলনের স্বার্থে সকলকেই কিছু না কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। সে মনোভাব থাকলেই ৩৫তম সম্মেলন সুন্দরভাবে অনুষ্ঠান করা সম্ভব। এক্ষেত্রে মিডিয়াসমূহকেও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন মোহাম্মদ আলমগীর।