GuidePedia
আপনার প্রতিষ্ঠানের বহুল প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন দিতে এখানে ক্লিক করুন অথবা মেইল করুন: chetonabarta@gmail.com

মোঃ রাশেদুজ্জামানঃ বর্তমান যুগে তথ্য প্রযুক্তির প্রভাব এত বেশি যে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়া চলাই দায় হয়ে পড়েছে।  সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাত্রিবেলা ঘুমোতে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা প্রযুক্তির সাথে একদম একাকার হয়ে আছি। যেন তথ্য প্রযুক্তি আমাদের জীবনের এক অংশ। 

বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির ভুল ব্যবহারই বেশি হয়ে আসছে।  এই তথ্য প্রযুক্তি আমাদের যতটা না উন্নতি করছে তার চাইতে বেশি আমাদের ক্ষতি করছে। একপ্রকারের আসক্ত হয়ে গেছি আমরা এই তথ্যপ্রযুক্তির মধ্যে। এই তথ্য প্রযুক্তির মাঝে আমরা এতটাই মত্ত হয়ে থাকি যে আমরা সময়মতো আল্লাহ তায়ালার এবাদত বন্দেগী পর্যন্ত করতে পারি না। তার মধ্যে আবার এই তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমেই নাস্তিকেরা তাদের প্রপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষের ঈমান কিভাবে ধ্বংস করতে হয় তা তারা ভালোভাবে রপ্ত করতে পেরেছে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে।


 


তথ্যপ্রযুক্তি যে এখন কোন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তা এখন বলাই বাহুল্য; এমন কোন ক্ষেত্র নাই যেখানে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে না শুধু তাই নয় এ তথ্যপ্রযুক্তির কারণে অনেক মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে কেননা, সেসব মানুষের কাজ রোবটই করে দিচ্ছে। আর এই রোবট কে তথ্যপ্রযুক্তির ভাষায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বলা হয়ে থাকে। এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানুষের নানা কাজকে খুব সহজ করে দিচ্ছে। যে কাজ করতে আগে ম্যানুয়ালি মানুষকে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হতো, অনেক সময় ব্যয় করতে হতো, অনেক মেধা খরচ হতো, অনেক চিন্তাশক্তির দরকার পড়তো; সেই কাজ রোবট করে দিচ্ছে এখন অনায়াসে। এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা রোবট কে শুধু কমান্ড করতে হয়, তাহলে সে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই কাজটি খুব নিখুঁতভাবে করে দেয়। 



যেমন ধরুন পেইন্টিং করতে একজন চিত্রকর বা চিত্রশিল্পীর কিরকম  কাঠ খড় পোড়াতে হয় তা একটু চিন্তা করে দেখুন। প্রথমে একটি প্লট চিন্তা করতে হবে যে আমি কিসের ছবি আঁকবো তারপর ক্যানভাস লাগবে, রং লাগবে, তুলি লাগবে তারপর মনের মাধুরী মিশিয়ে ক্যানভাসের উপর রং তুলির আঁকি-বুকিতে হয়ে ওঠে এক ধরনের আকর্ষণীয় চিত্র। যা বহু মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেয় এক অনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্য হিসেবে।  

কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছেন এই কাজটির রোবট এক মুহূর্তের মধ্যে করে দিতে পারে? লাগবে না কোন প্লট, লাগবে না কোন রং, লাগবে না কোন তুলি, লাগবেনা কোন ক্যানভাস শুধু রোবটকে কম্যান্ড করবেন যে, আমি এই ধরনের ছবি চাই তাহলে রোবটটি মুহূর্তের মধ্যেই আপনাকে সুন্দর একটি দৃশ্য অঙ্কন করে দেবে। 

যেমন, আমার এই পোস্টের সঙ্গে যে ছবিটি দেখতে পাচ্ছেন। আপনারা বলুন তো এই ছবিটির চিত্রকর কে? বা এই ছবিটি কোন মাধ্যমে আঁকা হয়েছে? কোন রং তুলি ব্যবহার করা হয়েছে কিনা? 

আসলে এই ছবিটি রংতুলি দিয়ে ক্যানভাসে আঁকা কোন শিল্পীর হাতের কারসাজি নয় বা কোন কম্পিউটার সফটওয়্যার ইলাস্ট্রেটর বা  ফটোশপেরও কারসাজি নয়। এই ছবিটা আমি তৈরি করেছি একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা রোবট ব্যবহার করে। আমি শুধু রোবটকে কমান্ড করেছি  যে আমি একটি গ্রামের  নদীর ছবি আঁকতে চাই যার দুপাশে ঘন জঙ্গল থাকবে।  আর রোবটটি সঙ্গে সঙ্গে আমাকে এই চারটি ছবি আঁকিয়ে দিল। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই  (সুবহানাল্লাহ)। 


শুধু তাই নয় আমি আজকে যে এই আর্টিকেলটি লিখছি তার অর্ধেকের বেশিরভাগই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে লেখা আমি শুধু দাড়ি কমা অর্থাৎ যতিচিহ্নের ব্যবহার করেছি কিবোর্ড ব্যবহার করে আর  কয়েকটা বানানের সংশোধন করেছি  কি-বোর্ড ব্যবহার করে।  তাছাড়া পুরো আর্টিকেলটি আমি শুধু মাইক্রোফোন দিয়ে আমার কম্পিউটারে মুখে মুখে বলেছি আর এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কম্পোজ করে দিয়েছে। বেশ কয়েকদিন ধরেই স্যোসিয়াল মিডিয়ায় আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স “মিডজার্নি” সম্পর্কে জেনে আসছিলাম।  এটি খুব সহজেই আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী শুধু কমান্ডের উপর ভিত্তি করেই বিভিন্ন রকম মনোমুগ্ধকর দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিক্স ডিজাইন করে দিতে পারে।  যা একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের বেশ কয়েক ঘন্টা বা কয়েকদিনও সময় লেগে যেতে পারতো। কিন্তু কিন্তু সেই গ্রাফিক্স ডিজাইনটি  “মিডজার্নি” রোবটটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই খুব নিখুঁতভাবে ডিজাইন করে দিচ্ছে। 

আর তখনই মহা পবিত্র গ্রন্থ আল-কুরআনের 50 তম সূরা, আল ক্বাফের 35 নম্বর আয়াতের কথা মনে পড়ে গেল। 

[ لَهُمۡ مَّا یَشَآءُوۡنَ فِیۡهَا وَلَدَیۡنَا مَزِیۡدٌ ]


অর্থঃ সেখানে তারা যা কামনা করবে তা’ই পাবে এবং আমার নিকট রয়েছে তারও অধিক। 


অর্থাৎ জান্নাতীরা জান্নাতে যা চাইবে, তাই পাবে। চাওয়া মাত্রই তা সামনে উপস্থিত দেখতে পাবে। বিলম্ব ও অপেক্ষার বিড়ম্বনা সইতে হবে না। 


মিডজার্নির এই কাজ দেখে আল্লাহ্তালার প্রতি আমার ঈমান আরো অনেক বৃদ্ধি পেল। দুনিয়ার কোন মানুষ যদি এমন সৃষ্টি করতে পারে যে তার কাছে শুধু কমান্ড করলেই মনের মত করে সেসব জিনিস এনে হাজির করে দেয়। আর এই মানুষকে যিনি সৃষ্টি করেছেন, সারা পৃথিবীকে যিনি সৃষ্টি করেছেন, সারা জাহানের  যিনি মালিক তিনি যে ওয়াদা করেছেন জান্নাতে জান্নাতিরা যা চাইবে তাই পাবে;  তাহলে কি করে সেটি অবিশ্বাস করতে পারি?


শুধু তাই নয়, তারা যা চাইবে তাতো পাবেই। কিন্তু আমি তাদেরকে আরো এমন কিছু দেব যা পাওয়ার আকাংখা পোষণ করা তো দুরের কথা তাদের মন-মগজে তার কল্পনা পর্যন্ত উদিত হয়নি। কারণ, আমার কাছে এমন নেয়ামতও আছে, যার কল্পনাও মানুষ করতে পারে না। ফলে তারা এগুলোর আকাঙ্খাও করতে পারবে না। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি আমার বান্দাদের জন্য এমন কিছু রেখেছি যা কোন চক্ষু কোনদিনে দেখেনি, কোন কান কোনোদিন শুনেনি এমনকি কোন মানুষের অন্তরেও উদিত হয়নি। [মুসলিম: ২৮২৪]


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জান্নাতে কারও সন্তানের বাসনা হলে গর্ভধারণ, প্রসব ও সন্তানের কায়িক বৃদ্ধি এগুলো সব এক মুহুর্তের মধ্যে নিষ্পন্ন হয়ে যাবে। [মুসনাদে আহমাদ ৩/৯, তিরমিযী ২৫৬৩, ইবনে মাজাহ ৪৩৩৮]


বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তি যেভাবে উন্নয়ন হচ্ছে বা যেভাবে বিপ্লব ঘটছে এর প্রত্যেকটি আবিষ্কার দেখলেই মহান আল্লাহতালার প্রতি আমার ঈমান তরতর করে বেড়ে যায় কেননা, মানুষের তৈরি করা জিনিস দিয়ে যদি এত কঠিন কাজ সহজে করা যায় যা আমাদের কল্পনারও বাইরে ছিল।

তাহলে আল্লাহ্ তায়ালা জান্নাতীদের সম্পর্কে যে কথা বলেছেন তাহলে সেটা কি করে অবিশ্বাস করতে পারি?


অনেক নাস্তিক আছে যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে না আল্লাহর সৃষ্টিকে স্বীকার করে না পরকালকে বিশ্বাস করে না জান্নাত জাহান্নাম কিছুই বিশ্বাস করে না তারা বর্তমানে প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেরাই অনেক বেশি জ্ঞানী হওয়ার ভান ধরে থাকে তারা এ কথা কখনোই কল্পনা করে না যে সবকিছুরই একজন সৃষ্টি  কর্তা আছেন। তারা কি আল্লাহ্ তায়ালার অসংখ্য নিয়ামতের দিকে দৃষ্টি দেয় না তারা কি এ নিয়ামত ভোগ করছেনা?  

বিশাল এই পৃথিবী আল্লাহ্ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন মাত্র ছয় দিনে এটা নাস্তিকেরা বিশ্বাস করতে চায় না তারা কি এটা বোঝেনা যে কম্পিউটারের কি-বোর্ডে কিছু একটা লিখে কমান্ড দিয়ে এন্টার চাপলে সঙ্গে সঙ্গে তা তৈরি হয়ে যায় যা আসলে প্রোগ্রামিংয়ের ফলে হয় আর যিনি সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা সেই মহান আল্লাহ্ তায়ালা যখন বলেন “কুন ফায়াকুন” অর্থাৎ- “হও” এবং সঙ্গে সঙ্গে তা হয়ে যায়। তাহলে সেটা কেন তারা বিশ্বাস করতে পারেনা? তারা প্রযুক্তি বিশ্বাস করে অথচ আল্লাহ্ তায়ালার হুকুমে বিশ্বাস করেনা। 

আসলে ঈমান থাকলে আর বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির দিকে তাকিয়ে চিন্তা করলে আল্লাহ্ র প্রতি ভালোবাসা বেড়ে যায় বহুগুণে। 


লেখকঃ মোঃ রাশেদুজ্জামান গীতিকার, সম্পাদক ও কলাম লেখক হাজরাদিঘী, বগুড়া সদর, বগুড়া। E-mail: rashaduzzaman777@gmail.com

Facebook.com/rashaduzzaman.md

মোবাইল: ০১৫১৬-১৩৮৪৪০


Comments
0 Comments

Post a Comment

মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
-সম্পাদক, চেতনাবার্তা।

 
Top