GuidePedia
আপনার প্রতিষ্ঠানের বহুল প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন দিতে এখানে ক্লিক করুন অথবা মেইল করুন: chetonabarta@gmail.com

ভূপাল চন্দ্র প্রামানিক (নীতিশ)ঃ দেশের সকল সরকারি এবং বেসরকারি হাইস্কুল একই শিক্ষাক্রমে পরিচালিত হলেও শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এবং আর্থিক দিক থেকে উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য বিরাজমান। নিম্নে বৈষম্যসমূহ তুলে ধরা হ’ল।
      ১) প্রধান শিক্ষক ঃ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের বেতন স্কেল ১৫,০০০ টাকা। সরকারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকগণ পরবর্তীতে ২ টি সিলেকশন গ্রেড পেয়ে ২২,২৫০ টাকা স্কেল প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। কিন্তু বেসরকারিতে প্রথম এবং শেষ স্কেল ১৫,০০০/- টাকা। সরকারি এবং বেসরকারিতে একই স্কেল প্রণয়ন করলে অনেক উচ্চ শিক্ষিত মেধাবীরা হাইস্কুলের শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত হতেন। অন্যদিকে বেসরকারিতে প্রধান শিক্ষক হতে অভিজ্ঞতা হিসাবে ১২ বছরের সহকারি শিক্ষকের অভিজ্ঞতা চাওয়ায় সহকারি প্রধান শিক্ষকগণ প্রধান শিক্ষক হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সহকারি প্রধান শিক্ষকের ০২ বছরের অভিজ্ঞতাসহ মোট ১০ বছরের অভিজ্ঞতার বিধান রেখে প্রজ্ঞাপন তৈরী করা প্রয়োজন।
         ২) সহকারি প্রধান শিক্ষক ঃ ১৩/০৯/১৩ খ্রিঃ তারিখের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সরকারি হাইস্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক হতে একজন প্রার্থীকে ফিডার পদে চাকরীর অভিজ্ঞতা ০২ বছর থাকতে হয় পক্ষান্তরে বেসরকারি হাইস্কুলে প্রয়োজন ১০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা । এ কারণে বেসরকারিতে সহকারি প্রধান শিক্ষকের শূণ্য পদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বেসরকারিতে সহকারি প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা কমিয়ে ০৮ বছর করা প্রয়োজন।
       ৩) সহকারি শিক্ষকের বেতন স্কেল ঃ সরকারি হাইস্কুলে স্নাতকোত্তর অথবা স্নাতক,বিএড উভয় শিক্ষকের বেতন স্কেল ৮,০০০ টাকা। তবে বিএড বিহীন শিক্ষককে ০৫ বছরের মধ্যে বিএড প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। অথচ বেসরকারি হাইস্কুলে স্নাতকোত্তর পাস শিক্ষকের বেতন স্কেল ৬,৪০০ টাকা এবং বিএড প্রশিক্ষণের পর ৮,০০০ টাকা স্কেলে বেতন ভাতা পাবেন। আসলে সরকারি এবং বেসরকারি উভয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং  বেতনক্রম সম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ করা উচিৎ। বেসরকারি হাইস্কুলের øাতকোত্তর পাস শিক্ষককে øাতক পাস শিক্ষকের সম পরিমান বেতন স্কেল ৬,৪০০ টাকা প্রদান করা মোটেই সমীচীন নয়।
         ৪) সহকারি শিক্ষক (কম্পিউটার) ঃ বর্তমানে সরকার ৬ষ্ঠ হতে ১২শ শ্রেণি পর্যন্ত কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয় পাঠ্য বিষয় হিসাবে চালু করেছেন। বর্তমানে কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ের পাঠদানের অনুমতিপত্রে  কম্পিউটার শিক্ষকের এমপিও ভূক্তি না দেওয়া শর্ত সাপেক্ষে বিষয় অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। অন্য দিকে ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরী করে প্রজেক্টরের মাধ্যমে শ্রেণি পাঠদান করানোর জন্য জোর তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরীতে কম্পিউটার শিক্ষকের ভূমিকাও অনেক। আসলে কম্পিউটার শিক্ষককে বেতনভাতা না দিয়ে অভূক্ত রেখে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণ হবে না। চাকরী আছে বেতন নেই এ কেমন কথা। তাদের বেতনভাতা প্রদানের জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি। অন্যদিকে সরকারি হাইস্কুলে সহকারি শিক্ষক (কম্পিউটার) পদ নেই, অথচ সরকারি অর্থায়নে স্থাপিত কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে। উক্ত পদটি সরকারি হাইস্কুলে সংযুক্ত করা বিশেষ প্রয়োজন।
         ৫) সহকারি শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম) ঃ ২৪ মার্চ, ২০১৩ খ্রিঃ তারিখের প্রজ্ঞাপন মোতাবেক বিএড বিহীন øাতকসহ উপাধি পাস শিক্ষক ৮,০০০ টাকা স্কেলে বেতন ভাতা পাবেন বলে উল্লে¬খ আছে, এটা একটি ভাল পদক্ষেপ। তবে সরকারি হাইস্কুলে উক্ত পদ শূণ্য থাকলেও শূণ্যপদ পূরণে বিজ্ঞপ্তি নেই। দেশের সকল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক (হিন্দুধর্ম) পদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।
       ৬) সহকারি গ্রন্থাগারিক/ক্যাটালগার ঃ বর্তমানে বেসরকারি হাইস্কুলে সহকারি গ্রন্থাগারিক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। সিংহভাগ স্কুলে এ পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। সহকারি গ্রন্থাগারিকের দায়িত্ব পালন সহ তাকে শ্রেণি পাঠদান করতে হয়। এ কারনে অনেক সময় তারা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে অপারগতা দেখায়।  এটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের øাতক পর্যায়ের একটি ৩য় শ্রেণির পদ, যদিও বেতন স্কেল ৮,০০০ টাকা। এই পদটি শিক্ষক কাম সহকারি গ্রন্থাগারিক নামকরণ করা প্রয়োজন। তাহলে সহকারি গ্রন্থাগারিকের দায়িত্ব সহ শ্রেণি পাঠদান উভয় কাজ তার দায়িত্ব এবং কর্তব্য বলে বিবেচিত হবে।
         ৭) শিক্ষক নিবন্ধন ঃ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক ২০০ (দুইশ) নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় পাস করলে একজন প্রার্থী বেসরকারি হাইস্কুলের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। অথচ সরকারিতে এ ধরনের অতিরিক্ত কোন যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করার পর আবার তাকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকার মনোনিত কর্মকর্তা দ্বারা গঠিত নিয়োগ বোর্ডের কাছে পুনরায় যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। সরকারিতে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা (যোগ্যতা নিরুপন পরীক্ষা) একবার, আর বেসরকারিতে এ পরীক্ষা দিতে হয় দুই বার। আসলে এক মুরগী দুই বার জবাই করার সামীল নয় কি? এনটিআরসিএ কর্তৃক সনদ প্রাপ্ত প্রার্থীকে আর কোন নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ প্রদান করা উচিৎ। নিবন্ধন সনদ প্রাপ্তরা আবার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সেলামী না দিলে হয়তো বা নিয়োগ পাবেন না। আমার মতে যে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক প্রয়োজন বা শূণ্যপদ রয়েছে, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা সংশ্ল¬ীষ্ঠ জেলা শিক্ষা অফিসার মহোদয়কে অবহিত করবেন। তারপর ডিইও সাহেব শিক্ষক নিবন্ধন প্যানেল থেকে মেধাভিত্তিক সিরিয়াল মোতাবেক প্রতিষ্ঠান প্রধানের আবেদনের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে আবেদনকৃত শূণ্যপদে নিয়োগ প্রদান করবেন। এতে করে স্থানীয় ভাবে নিয়োগের ক্ষেত্রে যে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি এবং টাকার খেলা হতো তা সম্পূর্ণরুপে দূর হতো। আবার শূণ্যপদগুলো যোগ্য প্রার্থী দ্বারা দ্রুত পূরণ হতো এবং প্রতিষ্ঠাগুলো নিয়োগের মহাঝামেলা হতে মুক্তি পেত। গত ২০ মে, ২০১৩ খ্রিঃ এর প্রজ্ঞাপনে সকল নিবন্ধনের মেয়াদ ০৫ বছর থেকে বাড়িয়ে আজীবন করা হয়েছে।
           ৮) ম্যানেজিং কমিটি এবং নিয়োগ ঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। ম্যানেজিং কমিটি গঠনে সংঘর্ষ, এমনকি প্রাণনাশের রেকর্ডও আছে। স্থানীয় ভাবে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার কারণে বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি হয়ে থাকে। বিশেষ করে নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক নিয়োগ বাণিজ্য হয়ে থাকে। এর কারনে অনেক প্রতিষ্ঠানে মামলা পর্যন্ত হয়ে থাকে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে স্থানীয় কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি/স্বল্প শিক্ষিত লোক সভাপতি/সদস্য হওয়ায় প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে বিভিন্ন মতপার্থক্য হওয়ার কারনে শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে। এর সভাপতি হিসাবে জেলা সদরের পৌরসভা এলাকার প্রতিষ্ঠানে জেলা প্রশাসক/জেলা প্রশাসক মহোদয় কর্তৃক মনোনিত কোন ১ম শ্রেণির সরকারি গেজেটেড কর্মকর্তা এবং জেলা সদরের পৌর এলাকার বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংশ্লীষ্ট উপজেলা নির্বাহি অফিসার/ ইউএনও মহোদয় কর্তৃক মনোনিত কোন ১ম শ্রেণির সরকারি গেজেটেড কর্মকর্তা হলে অনেকাংশে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি দূর হতো। কারণ সরকারি চাকরীজীবীদের জবাবদিহীতা এবং চাকরী হারানোর ভীতি রয়েছে। আবার যে কমিটির মেয়াদকালীন সময়ে নিয়োগ থাকবে ঐ কমিটি গঠনে অনেকেই ২০ হাজার টাকা জমা দিয়ে দাতা সদস্য বা বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় করে ভোটের মাধ্যমে সদস্য বা সভাপতি হতে প্রস্তুত। আর যদি নিয়োগ না থাকে তখন এরমক দাতা খূজে পাওয়া যায় না এবং ভোটবিহীন সিলেকশন কমিটি গঠিত হয়। কমিটির মেয়াদ ২ বছর থেকে বারিয়ে ৩ বছর করা আশু প্রয়োজন। শিক্ষক নিয়োগ ক্ষমতা কমিটির হাতে ন্যাস্ত থাকলে এ সমস্যা নিরসন সম্ভব নয়। যত দ্রুত সম্ভব বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার নিয়োগ ক্ষমতা ম্যানেজিং কমিটির হাতে না রেখে বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যাস্ত করার জোর দাবী জানাচ্ছি। বর্তমান সরকারের গত মেয়াদ হতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে শিক্ষক নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে উহা অদ্যাবধি গঠিত হয়নি।
            ৯) বাড়ি ভাড়া ঃ সরকারি হাই¯ু‹ল সহ প্রজাতন্ত্রের গ্রামীণ এলাকার সকল সরকারি কর্মকর্তা এবং কর্মচারিগণ নিুোক্ত হারে বাড়ি ভাড়া পেয়ে থাকেন- মূল স্কেল বা ব্যাসিক ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত মূল ব্যাসিকের ৫০%, ৫০০১ হতে ১০,৮০০ পর্যন্ত ৪৫%, ১০,৮০১ হতে ২১,৬০০ পর্যন্ত ৪০% এবং ২১,৬০১ হতে তদুর্ধ পর্যন্ত ৩৫% টাকা। অবশ্য নারায়নগঞ্জ, টঙ্গি, চট্রগ্রাম, খূলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল এর মেট্রোপলিটন এবং পৌর এলাকায় জন্য অতিরিক্ত ৫% টাকা এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য অতিরিক্ত ১৫% টাকা। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারিগণ বাড়ি ভাড়া পান মাত্র ৫০০ টাকা। এ বাড়ি ভাড়া অনতিবিলম্বে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
            ১০) চিকিৎসা ও উৎসব ভাতা ঃ প্রজাতন্ত্রের সকল সরকারি চাকরীজীবীগণের চিকিৎসা ভাতা ৭০০ টাকা, পক্ষান্তরে বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক কর্মচারিগণ ৩০০ টাকা পেয়ে থাকেন। আবার সরকারিতে উৎসব ভাতা মূল স্কেলের ১০০%, অন্যদিকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ মূল স্কেলের ২৫% এবং কর্মচারীগণ ৫০% উৎসব ভাতা পেয়ে থাকেন। আবার সরকারি চাকরীজীবীগণ উৎসব ভাতা ও চিকিৎসা ভাতা বাদে টিফিন ভাতা, ধোলাই ভাতা, ডোমেষ্টিক এইড এলাউন্স, যাতায়াত ভাতা, আপ্যায়ন ভাতা, প্রেষণ ভাতা, শিক্ষা সহায়ক ভাতা, ভ্রমন ভাতা, কার্যভার ভাতা পেয়ে থাকেন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারির অনুরুপ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারিগণকে পর্যায়ক্রমে উক্ত ভাতাদী প্রদান করা উচিৎ।
            ১১) টাইম স্কেল ও ইনক্রিমেন্ট ঃ সরকারি সকল নন গেজেটেড কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ ০৮, ১২, ১৫ বছরে পর্যায়ক্রমে ০৩ টি টাইম স্কেল এবং প্রতি বছর একটি বাৎসরিক প্রবৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) পেয়ে থাকেন। অথচ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারিগণ সমগ্র চাকরী জীবনে ০৮ বছর পর মাত্র একটি টাইম স্কেল এবং ৯১ সালের পে-স্কেল অনুযায়ী নির্ধারিত একটি বাৎসরিক প্রবৃদ্ধি পান। বাৎসরিক প্রবৃদ্ধি না থাকার কারণে নব নিযুক্ত এবং অভিজ্ঞ শিক্ষক সকলেই একই বেতন ভাতা পাচ্ছেন। যদি বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারিগণকে সরকারির অনুরুপ পর্যায়ক্রমে ০৩ টি টাইম স্কেল এবং প্রতি বছর বাৎসরিক প্রবৃদ্ধি প্রদান করা হতো, তাহলে শিক্ষক সমাজ আর্থিক সংকট হতে মুক্ত হয়ে সুন্দর জীবন যাপন করতেন ও অনেক মেধাবী উচ্চ শিক্ষিতরা শিক্ষকতা পেশায় ফিরে আসতেন।
        ১২) পদন্নতী ও বদলী ঃ সরকারি সকল চাকরীজীবীর অভিজ্ঞতা ও মেধার ভিত্তিতে পদন্নতী হয়ে থাকে এবং তাঁদের চাকরী বদলীযোগ্য। অন্যদিকে বেসরকারিতে এ ধরণের কোন বিধান নেই। শিক্ষক-কর্মচারিগণের অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা ও মেধার সমন্বয়ে বিভাগীয় ভাবে পদন্নতীর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং চাকরী বদলীযোগ্য করা প্রয়োজন। পরীক্ষামূলক ভাবে বিশেষ করে প্রধান শিক্ষক, সহকারি প্রধান শিক্ষক এবং নিুমান সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটরকে বদলী করলে বিদ্যালয় প্রশাসন পূর্ণদমে গতিশীলতা ফিরে পেত। কারণ একজন প্রশাসক দিনের পর দিন একই স্থানে কর্মরত থাকলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন এবং প্রশাসক হিসাবে স্বচ্ছতা হারিয়ে ফেলেন। তবে কাউকে বদলী করলে অবশ্যই তাকে সম্মানজনক বাড়ি ভাড়া দিতে হবে।
        ১৩) গ্র্যাচুইটি ও পেনশন ঃ প্রজাতন্ত্রের সকল অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিণের চাকরী ১০ বছর  এর অধিক, কিন্তু ১৫ বছরের কম হলে সর্বশেষ মূল স্কেলের (ব্যাসিক) প্রতি টাকার জন্য ২৩০ টাকা, ১৫ বছর কিন্তু ২০ বছরের কম এক্ষেত্রে প্রতি টাকায় ২১৫ টাকা এবং চাকরী ২০ বছর বা তদুর্ধ হলে প্রতি টাকায় ২০০ টাকা হারে গ্র্যাচুইটি পান। আবার সর্বশেষ মূল বেতনের ৮০% হারে প্রতি মাসে পেনশন এবং ৭০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পেয়ে থাকেন। আবার কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ ইচ্ছে করলে সম্পূর্ণ গ্রস পেনশন একসঙ্গে সমর্পন করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে অবশিষ্ট ৫০% এর জন্য অর্ধেক হারে অর্থাৎ এক টাকায় ১০০ টাকা হারে আনুতোষিক প্রাপ্য হবেন এবং আজীবন মেডিক্যাল ভাতা পাবেন। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারিগণ সরকারির সমপরিমান গ্র্যাচুইটি এবং পেনশন পান না। সম্প্রতি বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারিগণ অবসর ভাতা পাচ্ছেন। তবে চাকরী ১০ বছরের কম হলে কোন অবসর ভাতার আওতায় আসবে না। ০১ জানুয়ারী, ১৯৮০ খ্রিঃ তারিখ হতে চাকরী গণনা করা হবে। বর্তমানে নিুোক্ত হারে সরকারি তহবিল হতে শিক্ষক-কর্মচারিগণ অবসর ভাতা (গ্র্যাচুইটি) হিসাবে এককালীন আর্থিক সুবিধা প্রাপ্য হচ্ছেন। চাকরী ১০ বছর বা তদুর্ধ, কিন্তু ১১ বছরের কম হলে ১০ মাসের সর্বশেষ মূল স্কেলের সম পরিমান টাকা, চাকরীর অভিজ্ঞতা ১১ বছর হলে ১৩ মাসের, ১২ বছরে ১৬ মাস, ১৩ বছরে ১৯ মাস, ১৪ বছরে ২২ মাস, ১৫ বছরে ২৫ মাস, ১৬ বছরে ২৯ মাস, ১৭ বছরে ৩৩ মাস, ১৮ বছরে ৩৭ মাস, ১৯ বছরে ৪২ মাস, ২০ বছরে ৪৭ মাস, ২১ বছরে ৫২ মাস, ২২ বছরে ৫৭ মাস, ২৩ বছরে ৬৩ মাস, ২৪ বছরে ৬৯ মাস, ২৫ বছর বা তদুর্ধ চাকরীর জন্য ৭৫ মাসের সর্বশেষ মূল  স্কেলের সম পরিমান টাকা অবসর ভাতা পাবেন বলে প্রজ্ঞাপনে উলে¬খ আছে। তবে বর্তমানে ২০১৩ সালে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারিগণ চাকরীর বয়স ২৫ বছর বা তদুর্ধ হলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লে¬খিত ৭৫ মাসের সমপরিমান টাকা গ্রাচুইটি এবং ২৫ মাসের সমপরিমান টাকা কল্যাণ ট্রাস্ট পূর্ণাঙ্গরুপে পাচ্ছেন না। অবসর ভাতার পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে যৎসামান্য হারে পেনশন চালু করলে শিক্ষক সমাজ উপকৃত হতো।
            ১৪) শিক্ষকদের জন্য আলাদা পে-স্কেল প্রণয়ন ঃ বর্তমান সরকারের গত মেয়াদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় কর্তৃক ঘোষিত শিক্ষকগণের জন্য আলাদা পে-স্কেল প্রদান করা হবে এই সংবাদ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে অনেকবার প্রকাশিত হয়। কিন্তু অদ্যাবধি উক্ত পে-স্কেল ঘোষণা বা বাস্তবায়িত হয় নাই। আসলে শিক্ষকদের আলাদা পে-স্কেল প্রয়োজন আছে কি? সরকার যদি শিক্ষকগণকে আর্থিকভাবে সাবলম্বী করতে চান, তাহলে শিক্ষকগণ বর্তমানে যে স্কেলে বা বেতন কোডে বেতনভাতা প্রাপ্ত হচ্ছেন তার পরবর্তী উচ্চতর স্কেলে বেতনভাতা প্রদানসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি করা উচিৎ এবং বেসরকারি শিক্ষকগণকে সরকারির অনুরুপ বাড়ি ভাড়া, ইনক্রিমেন্ট, টাইমস্কেল, চিকিৎসাভাতা, উৎসবভাতা পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করলে আলাদা পে-স্কেল প্রয়োজন হবে না। কয়েক বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ায় শিক্ষককগণ এর আশাই হারিয়ে ফেলেছে। সাম্প্রতিককালে অবশ্য শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় আবারও ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকগণের আলাদা পেস্কেলের কথা।
           ১৫) মাধ্যমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ ঃ দেশে ২৭০৭৩ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩১৯ টি সরকারি। যা বিদ্যালয়ের সংখ্যায় তুলনায় অত্যন্ত নগন্য। ১৯৮৩ সালে দেশে সরকারি হাইস্কুল ছিল ১৭২ টি। আওয়ামী সরকারের গত মেয়াদে ২ টি হাইস্কুল এবং ১২ টি কলেজ জাতীয়করণ করা হয়। সম্প্রতি দেশের সকল বেসরকারি প্রাথমিক জাতীয়করণ করে বর্তমান সরকার দেশে এবং বিদেশে যতেষ্ট সমাদৃত হয়েছে। সকলের প্রত্যাশা শিক্ষাবান্ধব বর্তমান সরকার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোও পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করবে। আমাদের দেশে ১৯৪৭ পূর্ববর্তী অর্থাৎ ব্রিটিশ আমলে কিছু বিদ্যালয়, আবার কোনটি ১৯৭১ পূর্ববর্তী পাকিস্তান আমলে এবং অনেক বিদ্যালয় বাংলাদেশ হওয়ার পরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৪৭ পূর্ববর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়সমূহ প্রথমে মাইনর ইংলিশ (এম ই) স্কুল এবং পরে হাই ইংলিশ (এইচ ই) স্কুল নামে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্বীকৃতি পেয়ে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি পায়। পাকিস্তান আমলে ইস্ট বেঙ্গল এডুকেশন বোর্ড ঢাকা মাধ্যমিক স্বীকৃতি প্রদান করে। অর্থাৎ ঐ বিদ্যালয়গুলো ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার অনুমতির বছর হতে মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং অনেক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার সাল হতে স্বীকৃতি অনেক পরে পেয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলোকে তিন স্তরে বিভক্ত করা যেতে পারে। ১ম স্তর অতি প্রাচীন ব্রিটিশ আমল, ২য় স্তর প্রাচীন পকিস্তান আমল এবং ৩য় স্তর ১৯৭১ পরবর্তী। মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসাবে স্বীকৃতির দিক থেকে অতি প্রাচীন, প্রাচীন এবং বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করা প্রয়োজন ঃ  ক) বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক স্তরের স্বীকৃতির বয়স-১৫ (অতি প্রচীন-১৫, প্রাচীন-১০, সাম্প্রতিক-৫), খ) ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা-০৫, গ) জেএসসি পরীক্ষার ফলাফল-০৫, ঘ) এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল-০৫। উপজেলা ভিত্তিক যোগ্যতা নিরুপন নম্বরে যে সকল বিদ্যালয় উপরোক্ত শর্তে এগিয়ে থাকবে ঐগুলো প্রতিষ্ঠান আগে এবং পর্যায়ক্রমে অন্যগুলো জাতীয়করণ করা আশু প্রয়োজন। সম্প্রতি আমার বিদ্যালয়ের হারানো স্বীকৃতির কপি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রাপ্তির সময় কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মিটিং এর ভলিয়াম বই হতে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক বগুড়া জেলায় অতি প্রাচীন অর্থাৎ ১৯৪৮ সালের পূর্বে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিদ্যালয় ছিল মাত্র ২৫ টি। তন্মদ্ধে বগুড়া জিলা স্কুল, বগুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, সারিয়াকান্দী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সান্তাহার সরকারি হার্ভে উচ্চ বিদ্যালয় জাতীয়করন হয়েছে এবং বগুড়া পৌর বিদ্যালয়টি সায়ত্বশাসীত। বাঁকী ২০ টি বর্তমানে বেসরকারি রয়েছে। বিদ্যালয়গওলোর স্থাপিত সাল এবং স্বীকৃতির সাল দেওয়া হলো ঃ ১) নামুজা উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপিত-১৮৯৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসাবে স্বীকৃতি-১৯২৪, ২) করনেশন ইন্সটিটিউট ১৯১২-১৯২০ ৩) সিবগঞ্জ মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৩৭-১৯৩৯, ৪) দাড়িদহ উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৪৪-১৯৪৫ ৫) নন্দিগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৪৩-১৯৪৫, ৬) কাহালু পাইলট হাইস্কুল ১৯৪৪-১৯৪৪, ৭) দুপচাঁচিয়া পাইলট হাইস্কুল ১৯২৩-১৯২৬, ৮) তালোড়া আলতাব আলী উচ্চ বিদ্যালয় ১৯১৮-১৯২০, ৯) শেরপুর ডিজে উচ্চ বিদ্যালয় ১৮৬৮-১৮৯৯, ১০) সোনাতলা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ১৯০৮-১৯১২, ১১) সুকানপুকুর উচ্চ বিদ্যালয় ১৯১৪-১৯২০, ১২) কাগইল কে কে উচ্চ বিদ্যালয় ১৯১৬-১৯৩১, ১৩) মাদলা চাঁচাইতারা সংযুক্ত উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৩০-১৯৩১, ১৪) ডেমাজানী শ.ম উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৪৫-১৯৪৬, ১৫) আদমদিঘী আইপিজে উচ্চ বিদ্যালয় ১৯১৮-১৯২০, ১৬) শান্তাহার বিপি উচ্চ বিদ্যালয় ১৯২৯-১৯৩৩, ১৭) ধুনট এনইউ উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৪১-১৯৪৩, ১৮) গোশাইবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় ১৯১৮-১৯২০ এবং ১৯) নওখিলা পিএন উচ্চ বিদ্যালয়, সারিয়াকান্দি স্থাপিত-১৮৮২-১৯০১ এবং  ২০) নারচি উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৩৫ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অংশ নেয় বর্তমানে বিদ্যালয়টি মাজেদা রহমান বিদ্যালয় নামে আত্ম প্রকাশ করেছে।

            এমতাবস্থায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্ল¬ীষ্ঠ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং অনতিবিলম্বে উল্লে¬খিত সমস্যাগুলো পর্যায়ক্রমে সমাধান করে শিক্ষা ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন করার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।
লেখকঃ প্রধান শিক্ষক, নামুজা উচ্চ বিদ্যালয়,বগুড়া সদর,বগুড়া।
E-mail : bhupal.bogra@gmail.com
Comments
0 Comments
 
Top