আছাদুজ্জামানঃ বাঙালি জাতির অভিভাবক হারানোর দিন, শোকের দিন ও ইতিহাসের কলঙ্কিত কালো দিন আজ ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে হয়েছিল এ কলঙ্কিত অধ্যায়ের সূচনা। ৪৬ বছর আগের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল ক্ষমতালোভী নরপিশাচ ও একটি কুচক্রী মহল। বাঙালির মুক্তির মহানায়ক স্বাধীনতা সংগ্রাম শেষে যখন ক্ষত-বিক্ষত অবস্থা থেকে দেশটির পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন, তখনই ঘটানো হয় ইতিহাসের নির্মম এ ঘটনা।
জাতি
আজ বিনম্র শ্রদ্ধা ও শোকাবনত চিত্তে পালন করছে জাতীয় শোক দিবস। দীর্ঘ ২১
বছর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার যেমন হয়নি, তেমনি তার শাহাদাত বার্ষিকী পালনকেও
রাষ্ট্রীয় ও সরকারি পর্যায় থেকে উপেক্ষা করা হয়েছে। তবে জনগণ বরাবরই
স্বতঃস্ম্ফূর্তভাবে বঙ্গবন্ধুকে হারানোর এ দিনটি পালন করে আসছে। ১৯৯৬ সালে
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথমবারের মতো দিনটিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়
পালনের সূচনা হয়।
কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে দিবসটির রাষ্ট্রীয় মর্যাদা বাতিল করে দেয়। নানা পথপরিক্রমায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ায় ২০০৯ সাল থেকে দিবসটি আবারও রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে সেদিন ধানম্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের নিজ বাসভবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার পরিবার-পরিজনকেও নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হতে হয়েছিল।
সেদিন ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল মেঝ ছেলে শেখ জামাল ও ছোট ছেলে দশ বছরের শিশু শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।
পৃথিবীর ইতিহাসে এ জঘন্যতম হত্যাকান্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অতি আদরের ছোট ভাই শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ ও মেয়ে বেবি, সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্তা স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। জাতি আজ গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে এই শহীদদের। তবে বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় সেই কালরাতে প্রাণে রক্ষা পান।
সেদিন খুনিচক্র শুধু বঙ্গবন্ধুকেই নয়, তার সঙ্গে বাঙালির হাজার বছরের প্রত্যাশার অর্জন স্বাধীনতা এবং সব মহতী আকাঙ্খাকাকেও হত্যা করতে চেয়েছিল।এমনকি মুছে ফেলার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল বাঙালির বীরত্বগাথার ইতিহাসকে।অবশ্য খুনিদের সেই ষড়যন্ত্র টেকেনি। জাতি ও বিশ্বমানবের মানসপটে বঙ্গবন্ধু আজও স্বমহিমায় উজ্জ্বল, চিরভাস্বর। অভিশপ্ত ১৫ আগস্টে বাঙালি জাতির ললাটে যে কলঙ্কতিলক পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তা থেকে জাতির দায়মুক্তি ঘটে দীর্ঘ ৩৪ বছরের বেশি সময় পর। বঙ্গবন্ধু হত্যার চূড়ান্ত বিচারের রায় অনুসারে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি মধ্যরাতের পর কার্যকর হয় পাঁচ খুনির ফাঁসি।
এর মধ্য দিয়ে ষড়যন্ত্র ও অবৈধ ক্ষমতা দখলের ঘৃণ্য ও তমসাচ্ছন্ন অধ্যায়ের অবসান এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাঙালির বিজয়ের অভিযাত্রা আরেক ধাপ এগিয়ে যায়। চলতি বছরের ১২ এপ্রিলের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের একজন ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদের ফাঁসিও কার্যকর হয়েছে। তবে পুরো জাতি এখনও প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে বাকি পাঁচ পলাতক খুনির ফাঁসি কার্যকরের।